গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অতিরিক্ত ডিআইজি আবিদা সুলতানার পৈতৃক বাড়িতে ডাকাতি, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্ণ ও নগদ টাকা লুট। পুলিশের নিরাপত্তা ব্যর্থতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের ঠেঙ্গারবান্দা এলাকায় ঘটে যাওয়া একটি ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা শুধু একটি পরিবারকে আতঙ্কিত করেনি, বরং সারাদেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। ডাকাতির শিকার হয়েছেন স্বয়ং পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পরিবার—বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আবিদা সুলতানার পৈতৃক বাড়িতে।
৩০ মে রাতের ওই ঘটনায় ৬-৭ জনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল তিনতলা ভবনের নিচ তলার জানালার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে। তারপর একে একে দোতলা ও তিনতলায় উঠে অতিরিক্ত ডিআইজির বাবা নাজমুল আলম ও মা-কে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে। রাতের আঁধারে চরম ঠাণ্ডা মাথায় তারা নগদ প্রায় চার লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেয়। ঘরে ছিল কোরবানির পশু কেনার টাকা, একটি মেয়ের বিয়ের গয়না এবং স্থানীয় মসজিদ ও কবরস্থানের উন্নয়নের জন্য সংরক্ষিত অনুদান—সবই ডাকাতরা নিয়ে যায়।
ঘটনার গুরুত্ব শুধু এই কারণে নয় যে, একজন অতিরিক্ত ডিআইজির বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে—গভীরতর উদ্বেগের বিষয় হলো, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তার পরিবারও যদি নিরাপদ না থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে—স্থানীয় পুলিশের টহল কোথায় ছিল? এতো বড়সড় এক হামলা কীভাবে নিরবে সংঘটিত হলো?
ঘটনার পরপরই কালিয়াকৈর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে, তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। ওসি রিয়াদ মাহমুদের ভাষ্যমতে, “বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে বারবার শুনেছে জনগণ।
প্রশ্ন হলো—এই মামলার তদন্ত কী আদৌ কার্যকর হবে, নাকি অন্যান্য দুর্বৃত্তপনার মতো এটি ফাইলচাপা পড়বে?
এই ঘটনায় রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নীতির কাঠামো নিয়েই প্রশ্ন তোলা যায়। একজন অতিরিক্ত ডিআইজির বাবা-মাকে যদি অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘর লুট করা যায়, তবে এটি নিছক একটি ডাকাতি নয়—এটি একটি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।
এটি বোঝায়, শুধুমাত্র বাহিনীর উপস্থিতি নয়, তাদের কার্যকারিতা, গোয়েন্দা নজরদারি, স্থানীয় সিকিউরিটি ও জন-সচেতনতা ব্যবস্থারও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।
বর্তমানে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই ঘরোয়া নিরাপত্তায় সিসিটিভি, স্মার্ট অ্যালার্ম ও প্রতিবেশী নজরদারি সিস্টেম চালু আছে। বাংলাদেশেও এসব প্রযুক্তি ও সামাজিক উদ্যোগ জোরদার করতে হবে। একইসঙ্গে, পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের অপরাধ প্রতিরোধ কমিটিকে সক্রিয় করা জরুরি।
একজন অতিরিক্ত ডিআইজির পৈতৃক বাড়ি যদি নিরাপদ না থাকে, তবে নাগরিকের সাধারণ বাসভবনের নিরাপত্তা নিয়ে আর কতটা আশাবাদী হওয়া যায়? এই ঘটনা নতুন করে আমাদের সচেতন করে দিলো—নিরাপত্তা শুধু সরকারি কর্মকর্তা কিংবা এলিট শ্রেণির অধিকার নয়, এটি প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এবং এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে রাষ্ট্রকেই এর দায় নিতে হবে।
