বরিশালে যুবদল নেতার নেতৃত্বে গাড়ি থামিয়ে নারী ও তার দুই কন্যাকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা। ক্ষমতার দম্ভে পুলিশ সেজে তল্লাশি, হুমকি ও নিপীড়ন—এ ঘটনা কি বিচ্ছিন্ন, নাকি বৃহৎ রাজনৈতিক পটভূমির প্রতিফলন?

বরিশালের কলাডেমা এলাকায় প্রাইভেট কার থামিয়ে নারী ও তার পরিবারের উপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন। ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য’ পরিচয়ে যুবদল নেতা রমজান হাওলাদার ও তার সহযোগীরা বুধবার সকাল ১০টার দিকে গাড়ি আটকিয়ে নারীর দুই কন্যাকে শ্লীলতাহানি করে।
অভিযুক্তরা চলে যাওয়ার সময় বলে, “এখন আমরাই দেশ নিয়ন্ত্রণ করি”, এবং মামলা করলে পরিবারকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়।
এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগী রুবিনা আক্তার বরিশাল এয়ারপোর্ট থানায় মামলা করেন, যাতে রমজান হাওলাদার, মাসুম মাঝিসহ অজ্ঞাত ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এই ঘটনার অন্যতম উদ্বেগজনক দিক হলো—অভিযুক্তদের আত্মবিশ্বাস ও ভাষা, যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে তারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে বা ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে।
রমজান হাওলাদারের দাবি—”আমরাই এখন দেশ নিয়ন্ত্রণ করি”, কেবল একটি নারকীয় ঘটনার নয়, বরং একটি সম্ভাব্য ‘ছায়া শাসন’ বা ‘মাফিয়া রাজনীতির’ ইঙ্গিতও বহন করে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠ পর্যায়ের নেতারা কিভাবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে এবং প্রশাসনের ছায়ায় অপকর্ম চালায়—এই ঘটনা তার নির্মম উদাহরণ।
এই ঘটনায় যেভাবে মা, দুই কন্যা এবং এক কিশোর সন্তানকে টার্গেট করা হয়েছে, তা কেবল নারী নিপীড়নের নয়, বরং পরিবারভিত্তিক সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক আতঙ্কের নতুন রূপ তুলে ধরে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতি করা মানে যেন এখন শুধু দলীয় পদবী নয়, বরং একটি ‘অনানুষ্ঠানিক পুলিশি ক্ষমতা’ও হাতে পাওয়া।
এই অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে—নারীরা নিরাপদ কোথায়? এবং একটি দলের মাঠপর্যায়ের নেতাও যদি পুলিশ পরিচয়ে নারীদের নির্যাতন করতে পারে, তবে রাষ্ট্র কীভাবে এই সন্ত্রাসকে দমন করবে?
যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান তদন্ত কমিটির কথা বললেও এই প্রতিশ্রুতি অতীত অভিজ্ঞতায় বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। তদন্ত কমিটি হয়তো গঠন হবে, প্রতিবেদনও জমা পড়বে, কিন্তু বিচার? অতীত অভিজ্ঞতা বলে—বিচার হয় না, কিংবা রাজনৈতিক চাপ ও আপসে তা মুছে যায়।
ওসি জাকির হোসেন জানিয়েছেন অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—ঘটনার একদিন পর মামলা, অভিযুক্তদের প্রকাশ্যে হুমকি—তবুও এখনো গ্রেপ্তার না হওয়া কি প্রশাসনের অদক্ষতা, না রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ?
এই প্রশ্নের উত্তর যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এটিও জরুরি যে—এধরনের ঘটনা যদি বরিশালের মতো শহরে ঘটতে পারে, তাহলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কতজন রুবিনা আক্তার কোনোদিন অভিযোগই জানাতে পারে না?
এই ঘটনার বিচার শুধু রুবিনা আক্তার ও তার পরিবারের জন্য নয়, বরং এটি রাষ্ট্র ও আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার জন্য একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র। যদি অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায়, তবে এটিই হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য একটি ‘সতর্ক বার্তা’। অন্যথায়, রমজানের মতো আরও অনেকে বলবে—“আমরাই দেশ চালাই”।
