পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বাড়িতে নৃশংস হামলা, দুইজন নিহত। পরকীয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের বিশদ বিশ্লেষণ পড়ুন।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায় শুক্রবার রাতে সংঘটিত একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড আবারও প্রমাণ করলো—বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে ক্ষুদ্র পারিবারিক দ্বন্দ্ব কীভাবে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
ঘটনাস্থল ছিল পশ্চিম চরবলেশ্বর গ্রাম, চন্ডিপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম হাওলাদার (৫০) নিজ বাড়িতে সপরিবারে ছিলেন। রাত প্রায় ১১টার দিকে সৌদি প্রবাসী ইউনুস হাওলাদারের নেতৃত্বে ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত তাদের বাড়িতে ঢুকে শহিদুল ইসলামের ওপর এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে।
চিৎকার শুনে এগিয়ে আসেন তার স্ত্রী রেহেনা বেগম (৪২) ও বড় ভাইয়ের স্ত্রী মুকুল বেগম (৫৫)। দুর্বৃত্তদের হাতে দু’জনেরই শেষরক্ষা হয়নি—ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান শহিদুল ইসলাম এবং মুকুল বেগম। রেহেনা বেগম গুরুতর আহত অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো ঘটনার সম্ভাব্য প্রেক্ষাপট হিসেবে দীর্ঘদিনের পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং শহিদুল ইসলামের সঙ্গে প্রবাসী ইউনুসের স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতার অভিযোগকে দায়ী করছে। স্থানীয়রা জানান, ওই সম্পর্ক ঘিরে দুই পরিবারের মধ্যে তীব্র বিরোধ ছিল।
রেহেনা বেগম সংবাদমাধ্যমকে জানান:
“আমার স্বামীকে ও ভাবিকে বাঁচাতে গিয়ে আমাকে ওরাও কোপায়। ইউনুসসহ কয়েকজন মিলে আমাদের মেরে ফেলতে আসে।”
ইন্দুরকানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মারুফ হোসেন জানিয়েছেন—
“পরকীয়া নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ ছিল। এ কারণেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকিদের শনাক্ত করা হয়েছে।”
ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ দুটি পিরোজপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাসরিন জাহান সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং অভিযুক্তদের ধরতে বিশেষ অভিযান শুরু হয়।
এই দুই খুন গ্রামে চরম ভীতির সঞ্চার করেছে। আবারও প্রমাণ হলো, পারিবারিক অনৈক্য, পরকীয়া বা ব্যক্তিগত শত্রুতা কতটা ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, সামাজিক অমিল ও অসতর্ক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এই ধরনের সংঘাতকে উসকে দেয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের বহু ঘটনা দেখিয়েছে যে, প্রবাসী আয়ের প্রভাব, সম্পত্তির দ্বন্দ্ব আর পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন একসাথে মিলে ছোট গ্রামগুলোতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দেয়।
এই হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ তদন্ত, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সামাজিক-মানসিক পুনর্বাসন ছাড়া এমন ঘটনা বারবার পুনরাবৃত্তি হবে। গ্রামাঞ্চলে সচেতনতা বাড়ানো, পারিবারিক দ্বন্দ্ব সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা এবং নারী-পুরুষ সম্পর্কের প্রতি দায়িত্বশীল মনোভাব গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবি।
