 
                  রাজধানীর মিরপুরে রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রদল ও যুবদলের চার নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক সহিংসতার নতুন রূপ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংকট উঠে এসেছে।
রাজধানীর মিরপুরে এক রাতে ঘটে যাওয়া চাঁদাবাজির ঘটনাটি নতুন করে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ঘটনার কেন্দ্রে ছিলেন সিরাজুল ইসলাম (৫৬), এক সময়ের শ্রমিক লীগের কর্মী, যার অপরাধ—তিনি অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শুধুমাত্র এই পরিচয়ের জেরে একটি সশস্ত্র চক্র তার বাসায় ঢুকে ‘বাঁচতে হলে ২০ লাখ টাকা’ দেওয়ার হুমকি দেয়। ঘটনাটি রোববার (৬ জুলাই) গভীর রাতে রাজধানীর পশ্চিম মণিপুরে সংঘটিত হয়।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল ছাত্রদল ও যুবদলের অন্তত ১০-১৫ জন সদস্য, যাদের মধ্যে মিরপুর থানা ছাত্রদলের দুই সিনিয়র নেতাসহ চারজনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব। এরা হলেন: মিরপুর থানা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুর রহমান মিন্টু, যুগ্ম আহ্বায়ক তাবিত আহমেদ আনোয়ার, যুবদল নেতা রতন মিয়া এবং ছাত্রদল কর্মী ইসমাইল হোসেন।
ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলামের পরিবার জানিয়েছে, রাতে কলবেল বাজিয়ে ‘ছাত্রদল-যুবদল’ পরিচয়ে বাসায় প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা।
তাদের দাবি ছিল—তিনি আওয়ামী লীগের লোক, তাই তাকে ‘পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া’ হবে। আর এই বিপদ থেকে বাঁচতে হলে দিতে হবে ২০ লাখ টাকা।
পরিবারের আতঙ্কের সুযোগে তারা প্রথমে ২০ হাজার টাকা আদায় করে এবং পরবর্তী তিন ঘণ্টায় আরও ৪.৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
এই টাকা সংগ্রহ করতে সিরাজুল ও তার স্ত্রী চারতলার এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ধার করেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ছেলে-মেয়ের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আনান এবং নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ত্রিশ হাজার টাকা সরিয়ে দেন। দুর্বৃত্তরা বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তেই পুলিশ ও র্যাব এসে চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
সিরাজুলের স্ত্রী জাহানারা ইসলাম মিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় গ্রেপ্তার চারজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে ‘সশস্ত্র হুমকি, জিম্মি করে টাকা আদায় এবং প্রাণনাশের হুমকি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার চারজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এই ঘটনাটি কেবল একটি সাধারণ চাঁদাবাজির ঘটনা নয়—এটি রাজনৈতিক পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সন্ত্রাস ছড়ানোর এক উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত।
অতীতে সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে এমন কর্মকাণ্ড ঘটেছে, এবার বিরোধী ছাত্র ও যুব সংগঠনের সদস্যরা একই পথ অনুসরণ করছে।
এতে বোঝা যায়—বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কোথায় দাঁড়িয়ে আছে।
ঘটনার সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর দিক হলো—আক্রমণকারীরা রাজনৈতিক পরিচয় ও মতাদর্শকে ব্যবহার করেছে ‘অপরাধ বৈধতা’ দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে।
তারা প্রথমেই বলে—‘তুই আওয়ামী লীগ করিস’, যেন এটিই একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এটি রাজনৈতিক বিভাজনের এমন এক পরিণতি, যেখানে মতাদর্শভিত্তিক সহিংসতা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, রাজনীতির সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী দলের অঙ্গসংগঠনের অনেক সদস্য বিভিন্নভাবে অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেই যেন বিচার থেকে রেহাই পাওয়া যায়—এই সংস্কৃতি সাধারণ মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে।
- রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি একটি ট্রেন্ড হয়ে উঠছে?
- ছাত্ররাজনীতি এখন কতটা অপরাধপ্রবণ?
- পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতাই কি একমাত্র ভরসা?
এই প্রশ্নগুলো এখন নাগরিক সমাজের দরজায় কড়া নাড়ছে। সময় এসেছে ছাত্ররাজনীতিকে দায়িত্বশীল ও নীতিনিষ্ঠ পথে ফিরিয়ে আনার।
অন্যথায় এমন ঘটনা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক ছাপ ফেলবে।

 
                         
         
         
         
         
        