 
                  চাঁদা না দেওয়ায় নির্মমভাবে খুন হলেন ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ। পুরান ঢাকার সন্ত্রাস, পুলিশি দুর্নীতি ও বিচারহীনতার চিত্র ফুটে উঠেছে এই বর্বর হত্যাকাণ্ডে।
পুরান ঢাকার ইতিহাস প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী। কিন্তু আজ এই এলাকাই হয়ে উঠেছে খুন, চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য। এই চিত্রেরই করুণ প্রতিফলন দেখা গেল লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। যে মানুষটি প্রায় দুই দশক ধরে হালাল উপার্জনে ব্যবসা করছিলেন, সেই মানুষটিকে চাঁদা না দেওয়ার ‘অপরাধে’ পাথর দিয়ে হত্যা করতে হলো! সোহাগের মৃত্যুর পর মিডফোর্ড এলাকায় ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক আর বরগুনার ইসলামপুরে নেমে আসা শোক—দুটি চিত্র যেন বাংলাদেশের দুই বাস্তবতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ঢাকায় অপরাধ, বরগুনায় শোক।
দীর্ঘদিন ধরেই ‘মেসার্স সোহানা মেটাল’ নামে দোকানটি পরিচালনা করতেন সোহাগ। তার বোন, স্ত্রী ও মামার ভাষ্যমতে, একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র তার ব্যবসা থেকে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল।
এমনকি ব্যবসাটি দখল করে নেওয়ার হুমকিও ছিল।
সোহাগ চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় বুধবার বিকেলে তাকে বাসা থেকে ডেকে নেয়া হয়, পরে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যার পর ফেলে রাখা হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা বোঝাতে সোহাগের মামা মো. মন্টু মিয়ার বক্তব্যই যথেষ্ট: “এভাবে কোনো পশুর সঙ্গেও কেউ আচরণ করে না।”
যদিও মামলা দায়ের হয়েছে, কিন্তু স্বজনদের অভিযোগ, প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে নিরীহদের ফাঁসানো হচ্ছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ কোনো নতুন বিষয় নয়,
তবে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও যদি বিচার নিয়ে ‘কারসাজি’ চলে, তবে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভয় আরও গভীর হবে।
দুই সন্তান—সোহান (১০) ও সোহানা (১৪)—পিতৃহারা হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছে:
“আমরা এতিম হয়ে গেলাম। বাবাকে যারা মেরেছে, আমরা তাদের ফাঁসি চাই।”
–সোহাগের স্ত্রী লাকি বেগমের কণ্ঠে ঝরে পড়েছে গভীর আর্তনাদ: “আমার স্বামীর ব্যবসা ওরা সহ্য করতে পারেনি।
প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা চাইছিল। তা না দেওয়ায় শেষমেশ মেরেই ফেললো।”
সোহাগের হত্যাকাণ্ড একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পুরান ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী মুখ খুলে বলেন না, কিন্তু নিয়মিত চাঁদাবাজি, দখল, হুমকি ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্ত সন্ত্রাসী চক্র তাদের দুঃসহ করে তুলেছে।
এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে না পারলে রাজধানীর ব্যবসা পরিবেশ আরও নাজুক হয়ে পড়বে।
বিনিয়োগ, নিরাপত্তা ও নাগরিক আস্থায় চিড় ধরবে।
- কীভাবে দিনের পর দিন একজন ব্যবসায়ী চাঁদার হুমকির মধ্যে ছিলেন, অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা রোধে ব্যর্থ?
- কেন হত্যার পরও প্রকৃত অপরাধীদের বাদ দিয়ে অন্যদের ফাঁসানোর অভিযোগ উঠছে?
- ভেঙে যাওয়া একটি পরিবারের কান্না কি রাষ্ট্রকে নাড়া দেবে না?
সোহাগের মৃত্যু ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যর্থতা।
এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—পুরান ঢাকার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বুকের ওপর কেমন করে সন্ত্রাসী শাসন চাপিয়ে বসেছে।
এখন সময়, রাষ্ট্র তার দায়িত্বে জেগে উঠে সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করুক, এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের ভয়ভীতি ভাঙুক।

 
                         
         
         
         
         
        