 
                  বাংলাদেশের শরীয়তপুর-যাত্রাবাড়ী বাস রুটে যুবদল নেতার ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বাস চলাচল বন্ধ। সাধারণ যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ। ঘটনার বিশ্লেষণ।
পদ্মা সেতুর যুগান্তকারী প্রভাবকে কেন্দ্র করে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও শরীয়তপুর জেলার মধ্যে গড়ে উঠেছিল অত্যন্ত ব্যস্ত ও জনবহুল একটি বাস রুট। প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এই রুটে চলাচল করে থাকেন। কিন্তু সম্প্রতি এই রুটের গতি থেমে গেছে—অভিযোগ উঠেছে, বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের এক সাবেক নেতার নেতৃত্বে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবির জেরে। এই দাবির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায়, ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ পরিবহনের অন্তত ২৫টি বাস ভাঙচুর এবং একাধিক শ্রমিকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। ফলে পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছেন বাস মালিক ও চালকরা।
ইতোমধ্যে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে মালিক ও শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে হচ্ছে এবং সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বাস মালিকদের অভিযোগ, যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিম এই ৫ কোটি টাকা চাঁদার মূল দাবিদার।
তিনি ইতোমধ্যে প্রতি মাসে সাড়ে সাত লাখ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
কিন্তু সম্প্রতি বড় অংকের এই দাবি না মানায় তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা শুরু করেন।
এ ঘটনায় ৮ জুলাই থেকে শরীয়তপুর-যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী বাসগুলো বন্ধ রয়েছে।
চালক মাসুদ রানা বলেন, “যাত্রাবাড়ী গেলেই বিএনপির কিছু নেতা আমাদের বাস ভেঙে ফেলে, শ্রমিকদের মারধর করে। পরিবারের মুখে খাবার দিতে পারছি না।”
বিষয়টি আর নিছক শ্রমিক-মালিক দ্বন্দ্বে সীমাবদ্ধ নেই; বরং সাধারণ যাত্রীরা পড়েছেন ভয়াবহ ঝামেলায়।
আগের মতো যাত্রাবাড়ীতে বাস থামছে না, বরং বিকল্প রুটে যেতে হচ্ছে, যা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।
এক যাত্রী সিদ্দিক বলেন, “আগে যাত্রাবাড়ী নামতাম, এখন যেতে হচ্ছে ধোলাইপাড়। এই ভোগান্তি আমরা চাইনি।”

শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি ফারুক আহম্মেদ চৌকিদার ও মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক তালুকদার জানিয়েছেন, তারা এখন নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রুটে বাস চালাতে নারাজ।
তাঁরা দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত যুবদল নেতা ফাহিম অবশ্য নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, “আমি কারও কাছে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করিনি। বরং আমাদের গাড়ির রুট পারমিট থাকার পরেও তারা আমাদের বাধা দিচ্ছে।”
অন্যদিকে শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। ডিএমপির ক্রাইম ডিভিশনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ চলছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনাটি দেশের পরিবহন খাতে রাজনৈতিক প্রভাব ও পৃষ্ঠপোষকতার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে।
একটি রাজনৈতিক দলের একজন সাবেক নেতা কেবল পরিচয়ের জোরে কীভাবে কোটি টাকার চাঁদা দাবি করতে পারেন—এ প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের মনে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা রাজনীতির আশ্রয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহ দেয়।
ফলে রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
শরীয়তপুর-যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী হাজারো যাত্রী আজ আতঙ্কে, শ্রমিক-মালিকরা নিরাপত্তাহীনতায়।
রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এমন ঘটনা আরও বাড়বে।
এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং পরিবহন সেক্টরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করাই হতে পারে একমাত্র সমাধান।

 
                         
         
         
         
         
        