 
                  গোপালগঞ্জে এনসিপি’র সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ, পুলিশ-সেনা বাহিনীর নীরবতা ও ১৪৪ ধারা জারির ঘটনাটি দেশে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতার সংকটকে স্পষ্ট করে তুলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে সহিংসতা দিয়ে দমন করার প্রবণতা নতুন নয়। কিন্তু এবার স্থানটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ জেলা গোপালগঞ্জ। ঘটনাটি কেবল রাজনৈতিক সংঘাতের একটি অধ্যায় নয়, বরং রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা, সাংবিধানিক অধিকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর নিরপেক্ষতার প্রশ্নকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।
১৬ জুলাই ২০২৫, বুধবার গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে দুপুর দেড়টার দিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ আয়োজন করে।
যদিও রাজনৈতিক উত্তেজনার শঙ্কা আগেই ছিল, কিন্তু দুপুর দুইটার আগেই ২০০-৩০০ জন লাঠিসোঁটা হাতে ঘটনাস্থলে হাজির হন।
এ সময় পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও তারা প্রথমে সরে পড়েন আদালত চত্বরে।
এনসিপির নেতাকর্মীরা পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পালিয়ে যান।
হামলাকারীরা মঞ্চের চেয়ার ভাঙচুর করে, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং পরিস্থিতি পুরোপুরি বিশৃঙ্খল করে তোলে।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, এ হামলায় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যুক্ত, আর পুলিশ-সেনাবাহিনী ছিলেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান বিকেলে গোপালগঞ্জ শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেন।
যদিও পরিস্থিতি সাময়িক নিয়ন্ত্রণে আসে, কিন্তু হামলার ধরন, প্রতিক্রিয়া ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও হামলা রোধ না হওয়া একটি অস্বস্তিকর ইঙ্গিত দেয়।
সংবাদ অনুযায়ী, সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা অনেকটাই পরে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরণের পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন ছিল।
দেশের সংবিধান যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার দেয়, সেই অধিকার রক্ষা না হলে গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
আওয়ামী লীগ যদি এ ঘটনাকে সরাসরি প্ররোচিত না-ও করে, তবুও তাদের স্থানীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা সংঘটিত এ ধরণের হামলা দলের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বরং এমন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তিকে মোকাবিলা করা উচিত যুক্তি, বিতর্ক ও সংগঠনের মাধ্যমে; লাঠিসোঁটা দিয়ে নয়।

 
                         
         
         
        