 
                  উমামা ফাতেমা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে জীবনের ‘ট্র্যাজিক ঘটনা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। চাঁদাবাজি, দখল, টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগসহ বিস্ফোরক মন্তব্য উঠে এসেছে তার ফেসবুক লাইভে।
_মুক্তিবার্তা৭১
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেত্রী উমামা ফাতেমা এই আন্দোলনের ভিতরকার অসংখ্য দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির চিত্র উন্মোচন করেছেন। গতকাল রোববার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে প্রায় দুই ঘণ্টা ২৪ মিনিট ধরে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা, মানসিক যন্ত্রণা এবং অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের নেপথ্য তুলে ধরেন তিনি।
লাইভে উমামা বলেন, “এই প্ল্যাটফর্মে (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) থাকাটা আমার জীবনের একটি ট্র্যাজিক অধ্যায়।
যারা জুলাই আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে ছিল, তাদের অনেকেই এখন সস্তা চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পরপরই ‘সমন্বয়ক পরিচয়ে’ বিভিন্ন এলাকায় দখল, চাঁদাবাজি শুরু হয়।
প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে ডিসি-এসপি অফিসে প্রভাব খাটানো, টেন্ডার বাণিজ্য, চাকরির তদবির—এমনকি রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার নজিরও আছে।”
উমামা আরও জানান, প্ল্যাটফর্মটির সব সিদ্ধান্ত হতো ‘হেয়ার রোডের’ উপদেষ্টাদের বাসভবনে, যেখানে বাস্তব আন্দোলনের কর্মীরা ছিলেন কার্যত অদৃশ্য।
মুখপাত্র হওয়ার পরেই নজরে আসে দুর্নীতি:
“আমি মুখপাত্র হওয়ার আগে জানতাম না—এই প্ল্যাটফর্ম দিয়ে এত ধরনের বাণিজ্য হয়।
অথচ মুখপাত্র হওয়ার পরে দেখি, ডিসি নিয়োগেও এখান থেকে তদবির যায়।”
তিনি বলেন, “আমার পরিবারের অবস্থা ভালো, আমি স্কলারশিপ ছাড়াও বিদেশে পড়তে পারি।
কিন্তু কিছু লোক এই প্ল্যাটফর্মকে কেবল অর্থ উপার্জনের মেশিন বানিয়েছে।”
প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ:
উমামা জানিয়ে দেন, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে জানুয়ারি শেষে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
পরে যখন তাকে আবার ফিরে আসার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন অভিযোগ ওঠে—তিনি প্ল্যাটফর্ম ‘দখল’ করতে চাচ্ছেন।
তিনি বলেন, “আমি এই প্ল্যাটফর্মকে টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহৃত হতে দেখেছি, কেউ কাউকে মানুষের মতো দেখে না, কেবল রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থেই সবাই সক্রিয়।”
উমামা ফাতেমার লাইভ কেবল একটি ‘ব্যক্তিগত মতামত’ নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক হুঁশিয়ারি।
এই বক্তব্যগুলো তুলে ধরছে একটি সম্ভাবনাময় ছাত্র আন্দোলনের অবক্ষয়ের বাস্তব চিত্র।
যেখানে ‘বৈষম্যবিরোধী’ নাম ধারণ করেও অভ্যন্তরীণভাবে চলেছে দখল, চাঁদাবাজি, পদের লড়াই, আত্মসাৎ ও পৃষ্ঠপোষকতামূলক সুবিধাবাদ।
এই বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি শুধু আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নয়, বরং ছাত্র রাজনীতির নৈতিক সংকট, আস্থা ও আদর্শের মৃত্যু সম্পর্কে একটি গভীর বার্তা বহন করে।

 
                         
         
         
        