 
                  অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত ঘিরে স্বচ্ছতা, প্রশাসনিক শুদ্ধি ও রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে জোরালো বিতর্ক শুরু হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগ দেশব্যাপী রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থা AUSTRAC যখন মাহফুজের বড় ভাইয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেন শনাক্ত করে, তখন থেকেই প্রশ্ন উঠছে—জনগণের ‘আস্থার প্রতীক’ হিসেবে আত্মপ্রকাশকারী এক তরুণ উপদেষ্টার এমন আর্থিক জড়িত থাকার বিষয়টি কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়?
এই ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং গোটা সিস্টেমের স্বচ্ছতা ও নৈতিক অবস্থানের ওপর আস্থা চ্যালেঞ্জ করছে।
২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেপথ্য কুশীলব ও কথিত “মাস্টারমাইন্ড” মাহফুজ আলম, যিনি একসময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্রতুল্য তথ্য উপদেষ্টা।
তাকে ঘিরে যে রাজনৈতিক ও নৈতিক অবস্থান গড়ে উঠেছিল, তা এ অভিযোগে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
AUSTRAC-এর তদন্তে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা আরও উদ্বেগজনক।
জানা গেছে,
মাহফুজের বড় ভাই—যিনি অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি ট্যাক্সি চালান—তার কমনওয়েলথ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে।
এসব লেনদেন একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর প্রকল্প থেকে ‘কমিশনভিত্তিক ঘুষ’ হিসেবে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বনি আলম।
বনি আরও অভিযোগ করেন,
মাহফুজ বাংলাদেশে ফাইল তদবির ও উচ্চপর্যায়ের লবিংয়ের বিনিময়ে এই অর্থ সংগ্রহ করে বিদেশে পাচার করেছেন।
এই লেনদেনের ধরণ ও পরিমাণ দেখে অনেকেই একে ‘ছাগল কাণ্ড’-এর পুনরাবৃত্তি হিসেবে দেখছেন—যেখানে ক্ষমতার নেপথ্যে থেকে ব্যক্তি স্বার্থে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা লুটের অভিযোগ ছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাহফুজ আলমকে ঘিরে এক সময়ের যে ‘আদর্শিক বিপ্লবী’ ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
কেউ কেউ লিখেছেন, “নোয়াখালীর গৌরবময় ইতিহাস কলঙ্কিত হলো।”
আবার কেউ কেউ বলছেন,
“আদর্শের মুখোশধারীরা যখন দুর্নীতিতে জড়ায়, তখন রাষ্ট্র ও বিপ্লব—দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
বনি আলম এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের সকল সমন্বয়ক এবং তাদের পরিবার-ঘনিষ্ঠদের আর্থিক লেনদেন ও সম্পদের স্বচ্ছতা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
বিশেষভাবে আলোচিত হাতিয়ার সমন্বয়ক হান্নান মাসুদের পরিবারের সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
এই বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে রাজনৈতিক ব্যবস্থার গভীর দুর্বলতা এবং প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের দাবি।
অন্তর্বর্তী সরকারের একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং তদন্ত চলমান রয়েছে।
তবে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
মাহফুজ আলম এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেননি।
যখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনমানসে বিশ্বাস ও নৈতিকতার প্রতীক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তখন তার উপদেষ্টাদের এমন অভিযোগে জড়ানো সেই আস্থার উপর বড় আঘাত হানে।
এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে, ক্ষমতার কেন্দ্র যতই পরিবর্তিত হোক, দুর্নীতির শিকড় উপড়ে না ফেললে আদর্শিক পুনর্জাগরণ সম্ভব নয়।
বনি আলমের ভাষায়, “এখন সময় সততা রক্ষার, দুর্নীতির বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলার।”

 
                         
         
         
        