বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার সাবেক নেতা রিয়াদের বাসা থেকে ২.২৫ কোটি টাকার চেক উদ্ধার করেছে পুলিশ। জানা গেছে, সাবেক এমপির বাসা থেকে চাঁদা দাবি, স্বর্ণালংকার সংগ্রহ এবং এফডিআরসহ প্রভাব বিস্তার ছিল মূল লক্ষ্য।
স্বঘোষিত ‘বৈষম্যবিরোধী’ আদর্শ আর সাংগঠনিক পরিচয়ের আড়ালে ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ কীভাবে চাঁদাবাজি, প্রভাব বিস্তার এবং অর্থ-সম্পদের জাল বিস্তার করেছিল, তার ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে রিয়াদের বাসায় চালানো পুলিশি অভিযানে। গত সোমবার রাতে রাজধানীর নাখালপাড়ায় অভিযুক্ত ছাত্রনেতা আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ-এর বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার ৪টি চেক এবং প্রায় ২০ লাখ টাকার এফডিআর নথি উদ্ধার করে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদ-এর গুলশানের বাসায় সংঘটিত একটি চাঁদাবাজি চেষ্টাকে কেন্দ্র করে।
পুলিশ জানায়,
রিয়াদসহ পাঁচজন নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
শাম্মী আহমেদ পলাতক থাকায় চাঁদার কথা বলা হয় তার স্বামীর কাছে।
ইতোমধ্যে ১০ লাখ টাকা তারা নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে স্বর্ণালংকার আনতে গেলে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন।
এই ঘটনায় শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর গুলশান থানায় ৬ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে চাঁদাবাজির মামলা করেন।
এর ভিত্তিতে পুলিশ আসামিদের সাতদিনের রিমান্ডে নিয়েছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—
উদ্ধারকৃত বিপুল অঙ্কের চেক ও এফডিআর কি এই ‘আন্দোলন’ সংগঠনের নামে, নাকি তা শুধুই ব্যক্তিগত সম্পদের প্রতিফলন?
যদি সংগঠনের নামে হয়, তাহলে স্বচ্ছতা কোথায়?
আর যদি ব্যক্তিগত হয়, তাহলে প্রশ্ন জাগে—একজন ছাত্রনেতার হাতে এত টাকার উৎস কীভাবে এলো?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছাত্র রাজনীতির রূপান্তর, আদর্শহীন নেতৃত্ব এবং ক্ষমতাবান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি, জমি দখল, বাস টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ—এসব বিষয় আগেও উঠে এসেছে।
তবে এবারের ঘটনাটি ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে কারণ এটি তথাকথিত “বৈষম্যবিরোধী” আদর্শ বহনকারী একটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত।
অনেকেই বলছেন,
ছাত্র রাজনীতি এখন আর কেবল আদর্শ ভিত্তিক নয়—এটি হয়ে উঠেছে এক প্রকার পেশাদার অপরাধ সংগঠনের রূপান্তর।
আর এদের অনেকেরই রয়েছে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়া, মিডিয়ায় প্রশ্রয়, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরবতা।
প্রশ্ন উঠেছে—
রিয়াদের মতো নেতারা কীভাবে কোটি কোটি টাকার লেনদেন চালাতে পারেন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা ছাড়া?
এই ঘটনায় সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃত অর্থে আন্দোলনরত, ন্যায্য দাবি আদায়কারী তরুণ সমাজ।
যখন ‘বৈষম্যবিরোধী’ নামেই চাঁদাবাজি হয়, তখন সেই আদর্শিক লড়াই হেয় প্রতিপন্ন হয়।
একইসঙ্গে সন্দেহ জাগে—
আদর্শের মুখোশ পরে যারা কাজ করছে, তারা আদতে ক্ষমতা ও অর্থের দাস নয় তো?
রিয়াদের বাসা থেকে কোটি টাকার চেক উদ্ধারের ঘটনা কেবল একজন ব্যক্তির অপরাধ নয়—এটি পুরো ছাত্র রাজনীতির মূল্যবোধের অবক্ষয় ও ক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতার সংকট তুলে ধরে।
এই মুহূর্তে দরকার নিরপেক্ষ তদন্ত, দ্রুত বিচার, এবং ছাত্র রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি-অপরাধচক্র গড়ে তোলা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা।
