গোপালগঞ্জ হত্যাকাণ্ড এবং এনসিপির দুর্নীতির অভিযোগের পর সেনাবাহিনীর নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত—আর কোনো প্রোটোকল নয়। এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক ভারসাম্যে কী প্রভাব ফেলবে, তা বিশ্লেষণ করলেন আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চে আবারও বড়সড় এক ভূমিকম্প। এবারের কেন্দ্রবিন্দু সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, সহিংসতা ও গোপালগঞ্জে সংঘটিত বিতর্কিত হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে সশস্ত্র বাহিনী একটি চূড়ান্ত ও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে—এনসিপি নেতারা আর কোনো ধরনের প্রোটোকল বা আনুষ্ঠানিক সুবিধা পাবেন না।
এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতার পরিবর্তন নয়, বরং দেশের রাজনীতিতে এক মৌলিক মোড়।
এর ফলাফল হতে পারে বিস্তৃত এবং সুদূরপ্রসারী।
গোপালগঞ্জে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড অনেকের কাছেই ছিল ‘শুধু একটি সহিংস ঘটনা’।
কিন্তু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এটি ছিল রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সংঘটিত একটি গণহত্যা।
অভিযোগ রয়েছে, এই অভিযানে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ ছিল এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপ ও রাজনৈতিক প্রভাবের ফল।
এই প্রেক্ষাপটেই সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
এনসিপি নেতাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ নীতির এই রূপান্তর স্পষ্ট বার্তা বহন করে—আর নয়।
রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা, আনুষ্ঠানিকতা কিংবা সহযোগিতার ছায়াতলে দুর্নীতিবাজ রাজনীতির ঠাঁই হবে না।
সেনাবাহিনীর এই সিদ্ধান্ত কার্যত এনসিপিকে একঘরে করে ফেলার শুরু হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন,
এতদিন সেনাবাহিনীর ছায়া এবং রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের সুবিধাভোগী এনসিপি নেতাদের ক্ষমতার বলয় এখন চরমভাবে সংকুচিত হবে।
এই সিদ্ধান্ত তাদের প্রশাসনিক দাপট, প্রভাব বিস্তার এবং অপব্যবহার করার সক্ষমতাকে এক ধাক্কায় ভেঙে দিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত শুধু অভ্যন্তরীণ বাস্তবতায় প্রভাবিত নয়, বরং আন্তর্জাতিক চাপের ফল বলেও অনেকে মনে করছেন।
জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো সংস্থা গোপালগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তোলে।
পশ্চিমা কূটনৈতিক মহল এনসিপির ভূমিকা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলে।
ফলে সেনাবাহিনীর পক্ষে নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল অবস্থান নেওয়া ছিল সময়ের দাবি।
সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপকে অনেকেই বাহিনীর “রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা” হিসেবে দেখছেন।
এতে বোঝা যাচ্ছে, তারা আর রাজনৈতিক পক্ষপাত কিংবা বিতর্কিত নেতৃত্বের ছায়া চান না।
এটি একপ্রকার আত্মরক্ষামূলক কৌশলও, কারণ রাজনৈতিক বিতর্ক সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
প্রোটোকল বন্ধ মানে শুধু গাড়ির সামনে সাইরেন না বাজানো নয়—এটি হলো একটি দলে রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রত্যাহার।
একে রাজনৈতিক মৃত্যুপরোয়ানার সূচনা হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
রাজনৈতিক বলয়ে থাকা সুবিধাবাদীরা ধীরে ধীরে এনসিপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন, যা দলটিকে নেতৃত্বের সংকট, অর্থনৈতিক সংকট এবং জনসমর্থনের সংকটে ফেলবে।
সেনাবাহিনীর এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি দলকে প্রভাবিত করবে না, বরং রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নীতির প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসবে।
একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনী যখন নৈতিক অবস্থান গ্রহণ করে, তখন সেটি একাই একটি যুগ পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।
যদি এনসিপি ভুল পথে হেঁটে থাকে, তবে এটি তাদের জন্য সতর্কবার্তা—এবং অন্যদের জন্যও। সেনাবাহিনী হয়তো প্রোটোকল বন্ধ করেছে, কিন্তু বার্তাটি ছিল—জনগণের সেবক হও না যে শুধুই ক্ষমতার সওয়ারি।
