 
                  জনকণ্ঠ পত্রিকার সাম্প্রতিক দখল গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য এক ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত। ইউনূস সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ঘটনা প্রমাণ করে, গণমাধ্যম এখন রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসার শিকার।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে আজ এক অন্ধকারতম অধ্যায় রচিত হলো। একসময় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বলীয়ান, সাহসিকতায় গর্জে ওঠা দৈনিক জনকণ্ঠ আর জনতার মুখপত্র নয় — এটি এখন ক্ষমতালোভী ও সুবিধাবাদী একটি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে।
২০২৪ সালের রাজনৈতিক সহিংসতা ও প্রশাসনিক দমন-পীড়নের সময় থেকেই জনকণ্ঠের চারপাশ ঘিরে একটি অপারেশন চলছিল।
সেটি বাস্তবায়ন হলো প্রথমে এক বিতর্কিত সাবেক সামরিক অফিসারের ছায়ায় এবং দ্বিতীয় দফায় আরও সংঘবদ্ধভাবে — গতকাল, ৩ আগস্ট ২০২৫।
চোরের উপর বাটপারি হয়ে, সরকার-সমর্থিত আরেক গোষ্ঠী এসে দখল করল ঐতিহ্যবাহী এই সংবাদপত্র।
এই দখল শুধু একটি পত্রিকার দখল নয় — এটি বাংলাদেশের মুক্ত সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং আদর্শিক সাংবাদিকতার উপর এক হিংস্র আঘাত।
নাম না জানা থাকলেও,
ছায়া স্পষ্ট — এর নেতৃত্বে রয়েছেন রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত, বিতর্কিত অতীতের এক সামরিক কর্মকর্তা।
দীর্ঘদিন ধরে জনকণ্ঠের অভ্যন্তরে অস্থিরতা, সাংবাদিকদের ওপর চাপ, বেতন বন্ধ, নিউজরুমে ভয় এবং অবিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টি করা হয়েছিল।
এটি ছিল এক সুপরিকল্পিত take-over, যেখানে অদৃশ্য নির্দেশিকা অনুযায়ী পত্রিকাটিকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে শেষপর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়।
সেই নির্দেশিকা এসেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে, যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছত্রছায়ায় বাংলাদেশের ভেতরে একটি বিকল্প মিডিয়া নেটওয়ার্ক দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে — যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়, বরং ডিপ স্টেট, পশ্চিমা কূটনীতি ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর বার্তা প্রচার করা হবে।
জনকণ্ঠ কোনো সাধারণ পত্রিকা ছিল না।
এটি ছিল ১৯৭১-এ বিশ্বাসীদের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া এই পত্রিকাটি সাহসিকতার সঙ্গে বহুবার ক্ষমতার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু এখন?
এখন সেখানে বসেছে ছদ্ম সাংবাদিক, সুবিধাবাদী সম্পাদকীয় বোর্ড এবং প্রশাসনিক মদদে আগত দখলদাররা।
সেই সব কলম যোদ্ধারা আজ নিঃশব্দ, যারা একসময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে লেখায় ছিলেন অকুতোভয়।
এই দখল রাষ্ট্রীয় একটি প্রকল্পের অংশ — যে প্রকল্পে জনগণের কণ্ঠস্বর দমনে প্রতিটি মুক্তমনা সংবাদমাধ্যমকে দুর্বল করে দখলে আনা হচ্ছে।
যেখানে “নিরপেক্ষতা” মানে হচ্ছে শাসকের ভাষা পুনরাবৃত্তি।
জনকণ্ঠ দখলের ঘটনা এটি আরও একবার প্রমাণ করল, বাংলাদেশে এখন স্বাধীন সাংবাদিকতা নয়, বরং রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের মিডিয়া প্রয়োজনীয়তা হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
এই ঘটনাটি বড় আশঙ্কার কারণ।
কারণ একটি একদা-আদর্শ পত্রিকাকে দখল করে সেটিকে ক্ষমতার মুখপাত্রে রূপান্তর করার মানে হলো: বাকশক্তিকে স্তব্ধ করার চূড়ান্ত অপচেষ্টা।
এই ট্র্যাজেডি থেকে সাংবাদিকতা জগৎ যদি শিক্ষা না নেয়, তাহলে একে একে প্রতিটি পত্রিকা, নিউজপোর্টাল, টিভি চ্যানেল অথবা স্বাধীন ইউটিউব প্ল্যাটফর্মও একই পরিণতির দিকে এগোবে।
হয় শাসকের সেবাদাস হতে হবে, না হয় নিঃশব্দে নিঃশেষ হয়ে যেতে হবে।
জনকণ্ঠের পতন আসলে গোটা পত্রিকা জগতের জন্য এক অশনিসঙ্কেত — এবং পাঠকদের জন্য এক বিপদের ঘণ্টা।
জনগণের কণ্ঠস্বর রক্ষার অন্যতম মাধ্যম সংবাদপত্র।
জনকণ্ঠ ছিল সেই কণ্ঠস্বরের প্রতীক।
কিন্তু এখন তা প্রতীকীভাবে এবং কার্যত দখল হয়ে গেছে।
সময় এসেছে নতুন করে ভাবার — আমাদের কি আর কণ্ঠস্বর থাকবে?
না কি প্রতিটি কণ্ঠ একদিন করে দখল হয়ে যাবে, রাষ্ট্রীয় ছায়ায় লুকিয়ে থাকা আরেক গোষ্ঠীর হাতে?

 
                         
         
         
        