চট্টগ্রাম ক্লাবে সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদের মরদেহ উদ্ধার ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। মৃত্যু স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক? সংশ্লিষ্ট তদন্ত, সামরিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ এই প্রতিবেদনে।
চট্টগ্রামের অভিজাত চট্টগ্রাম ক্লাবে সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশীদের হঠাৎ মৃত্যুর খবরে দেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা মহলে আলোড়ন উঠেছে। সোমবার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় তার মরদেহ ক্লাবের গেস্ট হাউজের ৩০৮ নম্বর রুম থেকে উদ্ধার করা হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান,
সাবেক সেনাপ্রধান রাতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং এরপর ক্লাবের নির্ধারিত কক্ষে রাত্রিযাপন করেন।
সকালবেলা তার নির্ধারিত একটি মিটিং ছিল, কিন্তু একাধিকবার ফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
দরজায় নক করেও সাড়া না মেলায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ বারান্দার কাচের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখে তিনি বিছানায় নিস্তেজ পড়ে আছেন।
প্রাথমিক তদন্তে তার শরীরে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
তবে নিশ্চিত মৃত্যুর কারণ জানার জন্য পরিবারের অনুমতি নিয়ে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, সিআইডি, ক্রাইম সিন ইউনিটসহ একাধিক সংস্থা তদন্তে নেমেছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এম হারুন-অর-রশীদ বাংলাদেশের এক সময়ের আলোচিত সেনাপ্রধান।
২০০০ সালের শেষ দিকে শেখ হাসিনার আমলে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন এবং ২০০২ সালে বিএনপি জোট সরকারের সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন এবং পরে জাতীয় নিরাপত্তা ও সামরিক প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
অবসরের পর তিনি রাজনৈতিক ও বেসামরিক নানা আলোচনার অংশ হয়েছেন।
তার নাম উঠে এসেছে বিভিন্ন সময়ে সামরিক অবকাঠামো, প্রতিরক্ষা কৌশল এবং সরকারি নীতির সমালোচনায়ও।
তার মৃত্যুর খবরে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠে আসছে—
এটি স্বাভাবিক মৃত্যু, না কি এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে?
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তার অবস্থান ও অতীত ভূমিকা বিবেচনায় নিয়ে এমন মৃত্যু সহজে গ্রহণযোগ্য নয়।
বিশেষ করে বর্তমান রাজনৈতিক উত্তেজনা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নানা সমীকরণ ও সামরিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা তাকে কতটা অসন্তুষ্ট বা চাপে রেখেছিল—তা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
এমন সংবেদনশীল ঘটনায় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত উপস্থিতি পরিস্থিতির গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলেছে।
সেনাবাহিনী এই মুহূর্তে সরাসরি মন্তব্য না করলেও তাদের পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত কার্যক্রম দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।
এই মৃত্যু যদি সত্যিই স্বাভাবিক হয়, তাহলে ময়নাতদন্ত তা নিশ্চিত করবে।
তবে যদি এতে কোনো অসংগতি পাওয়া যায়, তাহলে তা বাংলাদেশে একটি বড় সেনা-রাজনৈতিক বিতর্কের সূচনা ঘটাতে পারে।
হারুন-অর-রশীদ শুধু একজন সাবেক সেনাপ্রধান ছিলেন না, তিনি ছিলেন ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে অবসরের পরে রাষ্ট্রের ছায়ায় থাকা এক প্রভাবশালী চরিত্র।
তার মৃত্যু নিয়ে এই মুহূর্তে যত প্রশ্ন, উত্তর তার চেয়ে ঢের কম।
