জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদের সাম্প্রতিক মন্তব্যে উঠে এসেছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের সংকট। সাবেক প্রধান বিচারপতির রিমান্ড থেকে শুরু করে সাংবাদিক নির্যাতন, মিডিয়া হাউজে হামলা—সবই ইঙ্গিত দিচ্ছে আইনের শাসন ও মানবাধিকার সংকোচনের দিকে।
বাংলাদেশের আইন অঙ্গন ও সংবাদমাধ্যম—দুই ক্ষেত্রই বর্তমানে এমন এক সঙ্কটের মুখোমুখি, যা স্বাধীন রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে। সম্প্রতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ একটি অনুষ্ঠানে যা বলেছেন, তা কেবল ব্যক্তিগত অভিমত নয়—বরং বাংলাদেশের আইনি ও গণমাধ্যম বাস্তবতার এক নগ্ন প্রতিচ্ছবি।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন—
“একজন বিচারপতির রায় পছন্দ না হলে তাকে হাতকড়া পরানো, এমনকি প্রধান বিচারপতিকে জেলে দেওয়া—এটা আইনের কোথাও নেই।
কিন্তু আমাদের দেশে এটাই ঘটেছে।”
এই বক্তব্য কেবল একটি ঘটনার বর্ণনা নয়, বরং আইন শাসনের মূল কাঠামোর উপর সরাসরি আঘাতের ইঙ্গিত।
বিচার বিভাগ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে ক্ষমতার ভারসাম্যের অন্যতম স্তম্ভ।
কিন্তু যখন একজন সাবেক প্রধান বিচারপতিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়, তখন সেটি শুধু একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নয়—বরং গোটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এক প্রকার “ওয়ার্নিং শট”।
মনজিল মোরসেদ যথার্থভাবেই বলেছেন—
“এটি ভবিষ্যতের বিচারকদের জন্যও এক হুমকি—তোমরা যদি সরকারের বা শক্তিশালী গোষ্ঠীর বিপক্ষে যাও, তাহলে তোমাদেরও একই পরিণতি হবে।”
এমন দৃষ্টান্ত কেবল বিচারপতিদের নয়, বরং সমগ্র আইন অঙ্গনকে আতঙ্কিত করে তোলে।
মনজিল মোরসেদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হলো,
শত শত আইনজীবী বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এর মানে যারা জনগণের পক্ষে আইনি লড়াই করবেন, তারাই আদালতে যেতে পারছেন না।
ফলে—
মক্কেলের আইনি সুরক্ষা দুর্বল হচ্ছে
বিচারের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে
আইনজীবী-আদালত সম্পর্ক ভেঙে পড়ছে
এটি সরাসরি মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং ন্যায়বিচারের মূলনীতির পরিপন্থী।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কঠিন সেন্সরশিপ, রাজনৈতিক চাপ ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে।
মনজিল মোরসেদ এ প্রসঙ্গে বলেন—
“অনেক সংবাদ মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা দিলেও, হাউজগুলো তা ছাপতে পারে না।
কারণ ছাপলে হামলা হবে, গরু জবাই করে ভোজ দেওয়া হবে, সম্পাদককে মারধর করে উল্টো হত্যা মামলায় ফাঁসানো হবে।”
এটি শুধু ভয় দেখানো নয়—বরং সংবাদ মাধ্যমকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার কৌশল।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের বক্তব্য মূলত একটি সতর্কবার্তা—এটি কেবল আজকের পরিস্থিতির জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য এক গভীর উদ্বেগের প্রতিফলন।
বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যম যদি নিরাপত্তাহীনতা ও দমনপীড়নের মধ্যে থাকে, তাহলে জনগণের ন্যায়ের অধিকার চিরতরে হুমকির মুখে পড়বে।
