 
                  নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ডিজিএফআই ভাঙার হুমকির পর আশরাফুল আলম খোকনের প্রতিক্রিয়া সেনাবাহিনীর বর্তমান অবস্থান ও নীরবতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী নিয়ে সরাসরি বক্তব্য সচরাচর এতটা স্পষ্ট ভাষায় শোনা যায় না। কিন্তু জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী যখন প্রকাশ্যে ডিজিএফআই সদর দপ্তর ভেঙে ফেলার হুমকি দিলেন, সেটি শুধু রাজনৈতিক বাক্যবাগীশ নয়—এটি ছিল রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাঠামোর প্রতি এক ধরণের সরাসরি চ্যালেঞ্জ।
আরো বিস্ময়কর বিষয়, এই বক্তব্যের পরও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
এমন নীরবতার প্রেক্ষাপটেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাক্তন উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন তার ফেসবুক পোস্টে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।
খোকনের ভাষায়, একসময় সেনাবাহিনী ছিল “বাঘ”, আজ তারা “খাঁচার বাঘ”—যারা রাজনৈতিক খোঁচাখুঁচি নীরবে হজম করছে।
পাটওয়ারীর বক্তব্যকে খোকন সরাসরি “প্রেসক্রিপশনধর্মী মন্তব্য” আখ্যা দিয়েছেন।
তার মতে, এনসিপির এই ধরনের মন্তব্য আকস্মিক নয়, বরং এটি একটি নির্দিষ্ট সূত্র বা পরিকল্পনা থেকে আসে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন;
এনসিপির এই অবস্থান শুধু জনপ্রিয়তার জন্য নয়, বরং সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তি ধ্বংস করে একটি ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি করার প্রচেষ্টা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সেনাবাহিনী প্রায়শই রাজনৈতিক অঙ্গনে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের নীরবতা প্রশ্ন তুলছে—এটি কি কৌশলগত আত্মসংযম, নাকি রাজনৈতিক চাপে অসহায় হয়ে পড়া?
খোকনের মতে,
বারবার সেনাবাহিনীকে হেয় করার পরও তাদের রাজকীয় প্রটোকল দেওয়া আসলে এক ধরনের বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি।
খোকনের পোস্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা ছিল—সেনাবাহিনী ধ্বংস হলে দেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশে অতীতে জঙ্গিবাদের উত্থান ঠেকাতে সেনাবাহিনী কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
তাই সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা আসলে সেই শক্তিগুলোর জন্য সুযোগ তৈরি করবে যারা গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে ফেলতে চায়।
২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর, কিংবা ২০১৬ সালের গুলশান হামলার পর সেনাবাহিনীর ভূমিকা দেখিয়েছে—তারা শুধু সীমান্ত রক্ষী নয়, বরং রাষ্ট্রের ভেতরের নিরাপত্তা ব্যূহ।
এনসিপির মতো দলগুলোর সরাসরি চ্যালেঞ্জ এবং সেনাবাহিনীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না দেওয়া ভবিষ্যতের জন্য একটি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত।
বাংলাদেশে সেনাবাহিনী শুধুমাত্র সামরিক শক্তি নয়—এটি দেশের সার্বভৌমত্বের অন্যতম রক্ষাকবচ।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্য ও খোকনের প্রতিক্রিয়া এই প্রশ্ন সামনে এনেছে—সেনাবাহিনী কি এখন সত্যিই “খাঁচার বাঘ”?
নাকি তারা একটি গভীর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝে ধৈর্যের সঙ্গে সময়ের অপেক্ষায় আছে?
যে দিকেই হোক, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য সেনাবাহিনীকে এই ধরনের প্রকাশ্য হুমকির জবাব রাজনৈতিক ও কৌশলগত উভয় দিক থেকেই দিতে হবে।

 
                         
         
         
        