 
                  নোয়াখালীর হাতিয়ায় মাদ্রাসাছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের পর গ্রাম্য সালিশে বিয়ে—এই ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশের গ্রামীণ বিচারব্যবস্থা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতা ও ভুক্তভোগীর মানবাধিকার নিয়ে।
বাংলাদেশের দ্বীপাঞ্চল হাতিয়ায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা আবারো আমাদের সমাজের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার নগ্ন দুর্বলতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। মাত্র কিশোরী এক মাদ্রাসাছাত্রীকে টানা তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করেন স্থানীয় মাদ্রাসাশিক্ষক ও মুয়াজ্জিন শাহেদুল ইসলাম। অথচ এর পরিণতি হয়েছে একটি তথাকথিত “গ্রাম্য সালিশি বিয়ে”।
অভিযুক্ত ব্যক্তি শুধু মাদ্রাসা শিক্ষকই নন, তিনি স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন এবং ইসলামী যুব আন্দোলনের সাবেক সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
ফলে তার অবস্থান ছিল সমাজের এক প্রকার প্রভাবশালী আসনে।
সেই ধর্মীয় আঙিনার ভেতরেই একটি নিরপরাধ ছাত্রীকে দিনের পর দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়েছে।
এটি শুধু ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, বরং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ও নৈতিকতার ওপর আস্থা ভেঙে দেওয়ার মতো ঘটনা।
ভুক্তভোগীর বাবা নেই, পরিবার অর্থনৈতিকভাবে অক্ষম।
এই অসহায় পরিস্থিতিকে ব্যবহার করেই স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্ব ঘটনাটিকে আদালতের পরিবর্তে সালিশে মিটিয়ে দেয়।
৬ লাখ টাকা কাবিন নির্ধারণ করে মসজিদের ভেতরেই বিয়ে সম্পন্ন করা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—
এটি কি সত্যিকারের ন্যায়বিচার, নাকি সমাজের ক্ষমতাশালীরা অপরাধীকে রক্ষার আরেকটি হাতিয়ার ব্যবহার করলেন?
এখানে ভুক্তভোগীর সম্মতি আদৌ স্বতঃস্ফূর্ত ছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা জরুরি।
কারণ সামাজিক চাপ, পরিবারের অসহায়তা এবং সমাজচ্যুত হওয়ার ভয়ে এমন সম্মতিকে বৈধ বলা যায় না।
বরং এই “বিয়ে” একটি জবরদস্তি বন্দোবস্ত, যা প্রকৃতপক্ষে ভুক্তভোগীর ভবিষ্যৎকে আরও অন্ধকার করে তুলেছে।
এ ধরনের ঘটনা যখন সালিশের মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা হয়, তখন অপরাধীর বার্তা হয়—ধর্ষণ করলেও বিয়ে দিয়ে দায়মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
এটি সমাজে ধর্ষণকে আরও উৎসাহিত করে।
রাষ্ট্র যদি এখানেই কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তবে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না।
হাতিয়ার এই ঘটনা আমাদের সামনে দুটি কঠিন প্রশ্ন রেখে গেল—
আমরা কি ধর্ষণকে বিয়ের মাধ্যমে “সমাধান” করতে চাই?
নাকি আমরা আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পথে দাঁড়িয়ে ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করব?
আজকের বাংলাদেশে এর উত্তর নির্ধারণ করবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারী কতটা নিরাপদ থাকবে।

 
                         
         
         
        