 
                  বাংলাদেশে রুটি ও বিস্কুটে ৭.৫% ভ্যাট আরোপ করায় শ্রমজীবী ও ছাত্রছাত্রীদের ওপর চাপ বাড়ছে। বেকারি মালিকদের হুঁশিয়ারি—ভ্যাট না কমলে দাম বাড়বে, ওজন কমবে। এই বৈষম্যমূলক নীতি কেন সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর—জানুন বিশ্লেষণে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের খাবার—রুটি ও বিস্কুট। শ্রমজীবী মানুষের সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষুধা নিবারণ পর্যন্ত, এই খাবার জড়িয়ে আছে জনজীবনের সঙ্গে। অথচ সরকারের সর্বশেষ ভ্যাট নীতি এই নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যকেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ঠেলে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। শনিবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএবিবিএমএ) এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে রুটি ও বিস্কুটে ৫% ভ্যাট ছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৫%-এ।
অর্থাৎ দেড় শতাংশ বাড়তি ভ্যাট চাপানো হয়েছে সরাসরি সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারে।
অথচ এই সময়ের মধ্যে পণ্যের দামও বাড়ানো হয়নি, প্যাকেটের ওজনও কমানো হয়নি।
ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন, বাজেটে এই ভ্যাট কমানো হবে।
কিন্তু উল্টো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় তাদের হুঁশিয়ারি—
ভ্যাট কমানো না হলে বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে ওজন কমাতে হবে।
এখানে প্রশ্ন উঠছে—সুপারশপে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের খাবারে ভ্যাট বহাল কেন?
এই নীতির ফলে পরিষ্কারভাবে দুই ধরনের শ্রেণি বৈষম্য তৈরি হচ্ছে—
- ধনীদের জন্য করমুক্ত সুবিধা।
- গরিবদের জন্য বাড়তি বোঝা।
বিএবিবিএমএ সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়ার ভাষায়,
“এটা শুধু বৈষম্যমূলক নয়, বরং জাতিকে অপমান করার শামিল।”
বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, খাদ্যনিরাপত্তার দিক থেকে বাংলাদেশ বর্তমানে ‘রেড জোনে’।
গবেষণা প্রতিবেদনগুলো বলছে, শ্রমজীবী ও ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন রুটি-বিস্কুট খেয়ে তাদের ক্ষুধা নিবারণ করেন।
এই বাস্তবতায় ভ্যাট আরোপ করা মানে মূলত গরিব মানুষের পেটে কর বসানো।
সহসভাপতি শাখাওয়াত হোসেন মামুন একেবারে খোলাখুলি বললেন,
“রাজস্ব সংগ্রহ করতে হলে ধনী ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের ওপর বাড়তি কর আরোপ করুন।
কিন্তু আমাদের শিল্পকে ব্যবহার করে গরিবদের শোষণের হাতিয়ার বানানো হচ্ছে।”
যদি এই ভ্যাট প্রত্যাহার না করা হয়, তবে যে পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে—
পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে।
ওজন কমবে, অর্থাৎ একই দামে কম পরিমাণ পণ্য পাওয়া যাবে।
বাজারে অস্থিরতা তৈরি হবে।
গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি খাদ্যসংকটে পড়বে।
এই সংকট সরাসরি সরকারকেই চাপের মুখে ফেলবে।
সরকার যখন একদিকে বিনিয়োগবান্ধব বার্তা দিতে চাইছে, অন্যদিকে খাদ্যপণ্যে ভ্যাট আরোপ করে আসলে রাজস্ব নীতি ও সামাজিক ন্যায্যতার মধ্যে সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, উন্নয়নশীল দেশে রাজস্ব সংগ্রহের অন্যতম কার্যকর উপায় হলো প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন—যেখানে ধনী বেশি ট্যাক্স দেবে এবং গরিবকে সুরক্ষা দেওয়া হবে।
অথচ বাংলাদেশে উল্টো প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে—ধনীদের জন্য ছাড়, গরিবদের জন্য চাপ।
ভ্যাট নীতির এই বৈষম্যমূলক কাঠামো কেবল ব্যবসায়ী বা শিল্পখাতের সমস্যা নয়—এটি সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের জীবনযাত্রার ওপর সরাসরি আঘাত।
সরকারের উচিত দ্রুত এই ভ্যাট প্রত্যাহার করা, নইলে বাজারে অস্থিরতা এবং সামাজিক ক্ষোভ দুই-ই বাড়বে।
গরিবের রুটি-বিস্কুটকে রাজস্বের হাতিয়ার বানালে তা কেবল অর্থনীতিকেই নয়, সরকারের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলবে।

 
                         
         
         
        