নরেন্দ্র মোদির চীন সফরে এসসিও সম্মেলনে শি জিনপিং ও ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক গ্লোবাল সাউথের শক্তি প্রদর্শনের প্রতীক। যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক জোটবদ্ধতার বিশ্লেষণ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে চীনের উত্তরাঞ্চলীয় বন্দরনগরী থিয়েনচিন সফর করছেন। ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলন শুধু আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্ল্যাটফর্ম নয়; বরং এটি এক নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, যেখানে রাশিয়া, চীন ও ভারত একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের বিকল্প পথ প্রদর্শন করতে চাইছে।
সম্মেলনে চীন, রাশিয়া ও ভারতের নেতাদের একত্রিত হওয়া নিঃসন্দেহে প্রতীকী শক্তি বহন করছে।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত রাশিয়ার জন্য এটি কূটনৈতিক সাফল্য।
চীনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রবিহীন বৈশ্বিক শাসন দেখানোর সুযোগ আর ভারতের জন্য এটি একদিকে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টা।
অন্যদিকে বৈশ্বিক দক্ষিণের নেতৃত্বের অংশীদার হওয়ার পদক্ষেপ।
দ্য চায়না-গ্লোবাল সাউথ প্রজেক্টের প্রধান এরিক ওলান্ডারও বলেছেন, শি এই সম্মেলনকে ব্যবহার করবেন একটি “Post-American Order” বা যুক্তরাষ্ট্র-নির্ভর বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প কাঠামো তুলে ধরতে।
ভারত-চীন সম্পর্ক ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর থেকে টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উভয় দেশই বার্তা দিচ্ছে—তারা প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহযোগী।
বিশেষত দ্রুত বর্ধনশীল ভারতীয় অর্থনীতি এবং অবকাঠামোগতভাবে শক্তিশালী চীন যদি পরস্পরকে সম্পূরকভাবে ব্যবহার করে, তবে এটি কেবল দুই দেশের জন্য নয়, পুরো এশিয়ার জন্যও ‘গেমচেঞ্জার’।
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বাণিজ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
ভারত সম্প্রতি রাশিয়া থেকে নির্দিষ্ট দামে তেল কিনে বিশ্ববাজার স্থিতিশীল করতে সাহায্য করলেও, ওয়াশিংটন এখন দেশটির ওপর শুল্ক চাপাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে শি–পুতিন–মোদির ঘনিষ্ঠতা একটি ‘Counter-Alliance’ গড়ে তুলছে, যা গ্লোবাল সাউথের জন্য নতুন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুযোগ তৈরি করতে পারে।
১৯৫৫ সালের বান্দুং সম্মেলনে ভারত ও চীনসহ এশিয়া–আফ্রিকার দেশগুলো শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অঙ্গীকার করেছিল।
আজকের এসসিও সেই ঐতিহাসিক চেতনার আধুনিক প্রতিফলন হতে পারে, যেখানে দক্ষিণ–দক্ষিণ সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্র–ইউরোপকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে।
চীন-ভারতের সম্ভাব্য ঘনিষ্ঠতা দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশগুলোর জন্য যেমন সুযোগ, তেমনি চ্যালেঞ্জ।
বিশেষত পানি, সীমান্ত ও অবকাঠামোগত প্রকল্পে তাদের সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।
মোদির চীন সফর কেবল একটি কূটনৈতিক সফর নয়; বরং এটি গ্লোবাল সাউথ বনাম গ্লোবাল নর্থের লড়াইয়ের এক প্রতীকী অধ্যায়।
শি–পুতিন–মোদির বৈঠক দেখিয়ে দিল—যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়েও একটি বিকল্প বৈশ্বিক শক্তি কাঠামো তৈরি হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই ঐতিহাসিক সুযোগকে ভারত কতটা কাজে লাগাতে পারবে?
