 
                  গাইবান্ধা জেলা কারাগারে আবু বক্কর সিদ্দিক মুন্না নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু ঘিরে রহস্য। পরিবার অভিযোগ করছে, মিথ্যা মামলায় আটক করে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে।
গাইবান্ধা কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু: পরিবারের অভিযোগ ‘পরিকল্পিত হত্যা’গাইবান্ধা জেলা কারাগারে আবু বক্কর সিদ্দিক মুন্না (৬৮) নামের একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ১২টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্না ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সাবেক সহসভাপতি এবং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি সক্রিয় থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না বলে তার পরিবার জানিয়েছে।
কারাগার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেলার মো. আতিকুর রহমান জানান, মুন্নার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা ছিল।
চলতি মাসের ২ তারিখে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
অসুস্থতা বাড়ায় তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে। কারা কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, চিকিৎসায় কোনো অবহেলা করা হয়নি।
পরিবারের অভিযোগ
অন্যদিকে, মুন্নার পরিবার এই মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলেই দাবি করছে। তার ছেলে সৌমিক অভিযোগ করে বলেন,
“বাবা দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। তবু তাকে রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করা হয়।
কারাগারে নেওয়ার পর আমাদের কাউকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। বরং নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।”
পরিবার আরও অভিযোগ করে যে, তাকে একের পর এক মামলায় জড়ানো হয়।
প্রথমে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর ও বিস্ফোরক দ্রব্য মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ।
জামিন পাওয়ার পরও জেলগেটে আরেকটি মামলায় পুনরায় গ্রেফতার করা হয়। এর পর থেকে তিনি কারাগারেই বন্দি ছিলেন।
রাজনৈতিক তাৎপর্য
সাম্প্রতিক সময়ে বগুড়ায় কারাবন্দি চার আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু এবং তার পরপরই গাইবান্ধায় মুন্নার মৃত্যু স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
পরিকল্পিতভাবে তাদের নেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে এবং সেখানেই ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরণের মৃত্যুর ঘটনা সরকারের নিরপেক্ষতা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করছে।
বিশেষ করে কারাগারে চিকিৎসা ব্যবস্থা কতটা কার্যকর এবং রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে আচরণে স্বচ্ছতা রয়েছে কি না—তা নিয়ে জনমনে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মুন্নার মরদেহ হাসপাতালেই রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তবে পরিবারের দাবি, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয় বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধার রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

 
                         
         
         
        