 
                  ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাইরাল ছবিকে ঘিরে ফটোশপ বিতর্কে নড়েচড়ে উঠেছে রাজনীতি। ডিজিটাল ফরেনসিক কী বলছে এবং এ নিয়ে জনআস্থার সংকট বিশ্লেষণ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের একটি ছবি। ২৩শে সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের লোটে নিউইয়র্ক প্যালেসে অনুষ্ঠিত অভ্যর্থনা নৈশভোজের ছবি বলে দাবি করা হলেও, দ্রুতই এটি ফটোশপ কারসাজি হিসেবে ধরা পড়ে। ডিজিটাল ফরেনসিক পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য এবং অনলাইন আলোচনার ঝড়ে বিষয়টি এখন রাজনৈতিক প্রভাব ফেলছে, বিশেষত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
২৬শে সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ছবিটি প্রকাশিত হওয়ার পর মুহূর্তেই এটি ভাইরাল হয়ে যায়।
দাবি করা হয়েছিল,
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের নৈশভোজে ট্রাম্প দম্পতির সঙ্গে ড. ইউনূস ও তার মেয়ে দীনা ইউনূস ছবি তুলেছেন।
কিন্তু খুব দ্রুতই নেটিজেনরা ছবির অসামঞ্জস্য লক্ষ্য করেন।
ফটোশপ বিশেষজ্ঞরা ডিজিটাল ফরেনসিক টুলস ব্যবহার করে দেখান, ছবির আলোর তারতম্য ও ওভারল্যাপিং স্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে এটি আসল নয়।
বিশেষ করে ট্রাম্পের কোটের হাতার ওপর ড. ইউনূসের ফতুয়ার প্রিন্ট উঠে আসা এবং আলোর ভিন্নতা ছবিটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এমনকি এআই-ভিত্তিক বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্মগুলোও ছবিটিকে “ফেক” সাব্যস্ত করেছে।

এই ঘটনা শুধুই প্রযুক্তিগত নয়, এর গভীর রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে।
একজন নোবেল বিজয়ী ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল পেজ থেকে বিভ্রান্তিকর ছবি প্রকাশ বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
রাজনৈতিক প্রচারে ইমেজ ব্যবহারের কৌশল পুরোনো হলেও ডিজিটাল যুগে এটি সহজেই উন্মোচিত হয়।
ফলে প্রচার না হয়ে উল্টো ট্রল ও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
যখন সরকার বা নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ভুল তথ্য প্রচারিত হয়, তখন জনআস্থা ভেঙে পড়ে এবং শাসনের নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়।
দেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক হাস্যরস, ট্রল ও কার্টুন তৈরি হয়েছে।
অনেকে বলছেন, “ভুল ছবি নয়, ভুল রাজনীতি”ই এখানে বড় সমস্যা।
বিশেষজ্ঞদের মতে,
একটি রাষ্ট্রীয় দলের বা নেতৃত্বের প্রচারে স্বচ্ছতা ও সততা বজায় রাখা অত্যাবশ্যক।
ড. ইউনূসের এ ধরণের বিতর্ক নতুন নয়।
সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে ১০৪ সদস্যের বিশাল বহর নিয়ে বিদেশ সফরে যাওয়াও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ফটোশপ বিতর্ক এই সমালোচনার আগুনে নতুন তেল ঢেলেছে।
যদি এটি শুধুই “প্রচার কৌশল” হয়ে থাকে, তবে তা রাজনৈতিকভাবে বিপরীত ফল বয়ে আনছে।
আর যদি “অবহেলা” হয়ে থাকে, তবে নেতৃত্বের পেশাদারিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে এখন যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, এই ফটোশপ বিতর্ক সেটিকে আরও স্পষ্ট করেছে।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করা যেমন জরুরি, তেমনি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও স্বচ্ছতা ও সততার বিকল্প নেই।
“ট্রাম্প-ইউনূস” ছবির ঘটনা প্রমাণ করেছে, ডিজিটাল যুগে সত্য গোপন রাখা অসম্ভব।

 
                         
         
         
        