গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি রিসোর্টে নাটকের শুটিংয়ের নামে এক অভিনয়শিল্পীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনের নারীদের নিরাপত্তা ও রিসোর্ট সংস্কৃতির অন্ধকার দিক নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।
বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনে আবারও আলোড়ন তৈরি করেছে ভয়াবহ এক ঘটনা। নাটকের শুটিংয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক তরুণী অভিনয়শিল্পীকে গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি রিসোর্টে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে নাট্যনির্মাতা মো. নাসির, তার সহযোগী বাবর ও এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
২২ সেপ্টেম্বর রোববার দিবাগত রাতে ‘রাস রিসোর্টে’ এই নৃশংসতা সংঘটিত হয়।
ভুক্তভোগী জানাচ্ছেন, শুটিংয়ের অজুহাতে তাকে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে নির্দিষ্ট কক্ষে আটকে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়।
অভিযোগ আরও গুরুতর হয়ে ওঠে যখন জানা যায়—অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি নাকি রিসোর্টের মালিকপক্ষের লোক।
অর্থাৎ এই অপরাধে বাহ্যিক সুরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ যোগসাজশ দুটোই কাজ করেছে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিসোর্ট সংস্কৃতি দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে।
তবে রিসোর্টগুলো অনেক সময়ই নিরাপত্তাহীনতার আখড়ায় পরিণত হচ্ছে।
সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণ, ভিজিটরদের তালিকা গোপন রাখা, আর্থিক প্রভাব খাটিয়ে অপরাধ আড়াল করার মতো চিত্র প্রায়ই সামনে আসে।
এই ঘটনায়ও রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতা বড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।
বিনোদন জগতে নতুনদের প্রায়ই কাজের সুযোগের প্রলোভন দেখিয়ে নানা ধরনের শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
ভুক্তভোগী শিল্পীও জানালেন, কয়েক মাসের পরিচয় ও একসঙ্গে কাজের সুযোগকে ব্যবহার করেই অভিযুক্ত নাসির তাকে ফাঁদে ফেলে।
এ ধরনের ঘটনা কেবল ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, এটি গোটা শিল্প অঙ্গনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও নারীদের নিরাপত্তার ওপর আঘাত।
শ্রীপুর থানার ওসি জানিয়েছেন, মামলা রুজু হয়েছে এবং গ্রেপ্তার অভিযানে পুলিশ মাঠে নেমেছে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—অভিযুক্তরা কেন সহজেই গা-ঢাকা দিতে পারে?
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের গুরুত্ব সত্ত্বেও দ্রুত গ্রেপ্তার না হওয়া বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রতি ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশে যৌন সহিংসতার মামলায় অভিযুক্তদের প্রভাবশালী সম্পর্ক, অর্থ ও ক্ষমতা প্রক্রিয়াকে বারবার দুর্বল করে দিয়েছে।
এই ঘটনা শুধু এক অভিনয়শিল্পীর ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়—এটি পুরো সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
শিল্পী সমাজ, দর্শক ও সাধারণ মানুষকে প্রশ্ন করতে হবে—কেন নারী শিল্পীরা নিরাপদ কর্মপরিবেশ পাচ্ছেন না?
কেন রিসোর্টগুলো অপরাধের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হচ্ছে? আর সবচেয়ে বড় কথা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙতে রাষ্ট্র কতটা আন্তরিক?
গাজীপুর রিসোর্টে অভিনয়শিল্পী ধর্ষণের এই ঘটনা বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনের নিরাপত্তাহীনতা, রিসোর্ট সংস্কৃতির অন্ধকার দিক এবং আইনি প্রক্রিয়ার দুর্বলতাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে।
এখন সময় এসেছে কঠোর আইন প্রয়োগ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সমাজে যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা দেখানোর।
অন্যথায়, এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটবে এবং বিচারহীনতার অন্ধকার চক্র আরও গভীর হবে।
