 
                  শেখ হাসিনার ৭৯তম জন্মদিনে বিশ্লেষণ—বাংলাদেশের অর্থনীতি, মেগা প্রজেক্ট, দারিদ্র্য বিমোচন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে তাঁর নেতৃত্ব কিভাবে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। আজ তিনি পা রাখলেন জীবনের ৭৯ বছরে। আধুনিক বিশ্বে তাঁর মতো দীর্ঘসময় ধরে সফল নেতৃত্ব দেওয়া রাষ্ট্রনায়ক বিরল। প্রায় দেড় যুগ ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শুধু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই অর্জন করেনি, বরং অর্থনীতি, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তিতে এক অনন্য রূপান্তর ঘটিয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে অর্জিত উন্নয়ন আজ বৈশ্বিক পরিসরেও প্রশংসিত ও স্বীকৃত।
২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
একসময় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮% অতিক্রম করে বাংলাদেশকে এশিয়ার অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত করে।
মাথাপিছু আয় প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত করে।
২০২১ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশের LDC থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ অনুমোদন করে, যা দেশের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তার স্বীকৃতি।
দারিদ্র্যের হার ৪০% থেকে নেমে আসে ১৮%-এ, চরম দারিদ্র্য সীমিত হয় ১০%-এর নিচে।
নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস এবং নারীর শিক্ষা সম্প্রসারণে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যেমন—বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধীভাতা, ভিজিডি-ভিজিএফ—কোটি মানুষের জীবনে সরাসরি ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।
শেখ হাসিনার উন্নয়ন-দর্শন সর্বাধিক প্রতিফলিত হয়েছে মেগা প্রজেক্টগুলোয়:
- পদ্মা সেতু: নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত, যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে।
- মেট্রোরেল (MRT-6): ঢাকায় আধুনিক গণপরিবহনের সূচনা।
- কর্ণফুলী টানেল: দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল, চট্টগ্রামকে দিলো নতুন গতি।
- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: জ্বালানি নিরাপত্তায় নতুন অধ্যায়।
- পায়রা ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে—সবই তাঁর দূরদর্শী পরিকল্পনার প্রতিফলন।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়নে আইসিটি এখন গ্রামীণ মানুষের হাতের মুঠোয়।
প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ ভর্তি, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ ও মেয়েদের জন্য স্টাইপেন্ড প্রবর্তন শিক্ষা বিস্তারে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
পুনরায় চালু হওয়া কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
কোভিড-১৯ মহামারির সময় ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক প্রশংসা এনে দেয়।
শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মহলেও স্বীকৃত:
জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ অ্যাওয়ার্ড (২০১৫)
ITU পুরস্কার, গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড
বিশ্ব শান্তি পুরস্কার ও এনার্জি সেক্টরে বিশেষ সম্মাননা
রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক ভূমিকার জন্য বৈশ্বিক প্রশংসা
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশকে শীর্ষ অবস্থানে নিয়ে যান।
প্রতিবেশী কূটনীতিতে বঙ্গবন্ধুর নীতি—“Friendship to all, malice to none”—পুনরুজ্জীবিত করেন।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোর কণ্ঠস্বর হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত।
শেখ হাসিনার ৭৯তম জন্মদিন কেবল একটি জন্মবার্ষিকী নয়—এটি বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রার এক প্রতীক।
তাঁর নেতৃত্বে মেগা প্রজেক্ট, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস, নারী ক্ষমতায়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য উন্নয়ন সবই প্রমাণ করে যে তিনি কেবল একজন রাজনীতিবিদ নন, বরং আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি।
আজ তাঁর জন্মদিনে জাতি শুধু একজন নেত্রীর জীবনপথকেই উদযাপন করছে না, বরং একটি স্বর্ণালী উন্নয়ন অধ্যায়কেও স্মরণ করছে।

 
                         
         
         
        