 
                  ভাষাসংগ্রামী ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিককে শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা। তাঁর দেহদান, সাহিত্যকীর্তি ও ভাষা আন্দোলনে অবদান বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।
বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে আহমদ রফিক একটি অমর নাম। শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধায় তাঁর কফিন আচ্ছাদিত হওয়ার দৃশ্য যেন প্রমাণ করল, রাষ্ট্র ও সমাজ তাঁকে ভাষাসংগ্রামী, সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ হিসেবে কীভাবে গ্রহণ করেছে। কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক (১৯২৯–২০২৫) তাঁর দীর্ঘ জীবনের প্রতিটি ধাপেই রেখে গেছেন সৃজনশীলতার স্বাক্ষর।
আহমদ রফিকের জীবনের বিশেষত্ব ছিল তাঁর আত্মত্যাগী মানসিকতা।
মৃত্যুর পর দেহ বারডেম হাসপাতালে দান করার সিদ্ধান্ত তাঁর মানবপ্রেমের এক অনন্য প্রকাশ।
একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা প্রাপ্ত হলেও তিনি একান্ত সাধারণ জীবনে থেকে গেছেন।
নিউ ইস্কাটনের একটি ভাড়া বাসায় একাই বসবাস করা, স্ত্রীকে হারানোর পর নিঃসঙ্গ জীবন—এসবই তাঁর জীবনচিত্রকে করে তুলেছে ব্যতিক্রমী।
শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনার মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চাকে সমৃদ্ধ করেছেন।
বিশেষত দুই বাংলায় রবীন্দ্রচর্চার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অপরিসীম।
কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে যে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি দিয়েছে, তা কেবল ব্যক্তিগত স্বীকৃতি নয়, বরং দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনের প্রতীক।
আহমদ রফিকের জীবনকাহিনি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভাষা আন্দোলন কেবল রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ছিল না, এটি ছিল সাংস্কৃতিক মুক্তির সংগ্রামও।
তিনি সেই সংগ্রামের ধারক হয়ে আজীবন কাজ করেছেন।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে প্রায় দৃষ্টিহীনতা ও শারীরিক দুর্বলতা তাঁকে থামাতে পারেনি; বরং তিনি শেষ দিন পর্যন্ত বাঙালির আত্মপরিচয় ও সংস্কৃতির সেবক হয়েই থেকেছেন।
আজকের প্রজন্মের কাছে আহমদ রফিক শুধু একজন লেখক নন, তিনি এক আলোকবর্তিকা।
তাঁর দেহদানের মতো মহৎ সিদ্ধান্ত আমাদের শিক্ষা দেয়—মানুষের জীবনকে অর্থবহ করে তোলে দায়বদ্ধতা, ত্যাগ এবং মানবতার সেবা।
শহীদ মিনারে তাঁর প্রতি এই শ্রদ্ধা বাঙালির আত্মপরিচয়কে আরও দৃঢ় করে, আর তাঁর জীবনচর্চা প্রমাণ করে, সত্যিকারের ভাষাসংগ্রামী কখনো মরে না।

 
                         
         
         
        