 
                  পাকিস্তান নেভির সম্ভাব্য মিসাইল টেস্ট দক্ষিণ এশিয়ার সামুদ্রিক ভারসাম্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর একক আধিপত্য চ্যালেঞ্জের মুখে, আর চীন-পাকিস্তান সামরিক সহযোগিতা ক্রমেই কৌশলগত গভীরতায় পৌঁছাচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার সামুদ্রিক নিরাপত্তা ভারসাম্য আবারও এক নতুন উত্তেজনার মুখে। পাকিস্তান নেভি আগামী ৯-১০ অক্টোবর উত্তর আরব সাগরে, গোয়াদারের পার্শ্ববর্তী ওরমারা অঞ্চলে ২৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নোটাম (Notice to Airmen) জারি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে পাকিস্তান নেভি একটি উন্নতমানের ক্রুজ বা হাইপারসনিক মিসাইলের পরীক্ষা চালাবে।
পাকিস্তানের সামরিক পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন,
এটি হতে পারে Fatah-4 অ্যাডভান্স সাবসনিক ক্রুজ মিসাইলের নেভাল ভার্সন, অথবা চীনের তৈরি CM-400AKG হাইপারসনিক মিসাইলের একটি সাব-স্ট্যান্ডার্ড সংস্করণ।
উভয় মিসাইলই উচ্চ গতির ও নির্ভুল আঘাতের সক্ষমতার জন্য পরিচিত।
CM-400AKG এর ইতিহাসও যথেষ্ট আলোচিত।
পাকিস্তান নেভি এই মিসাইল ব্যবহার করেছিল অপারেশন ‘বুনিয়ানুম মারসুস’ (সীসাগলা প্রচীর)-এ, যেখানে ভারতের S-400 কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল (C2) ভেহিক্যাল ধ্বংসের দাবি করা হয়।
এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক ভারসাম্যে এক প্রতীকী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিল।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ও নৌশক্তির ভারসাম্য
ভারত বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রাহ্মস মিসাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে সুস্পষ্ট নৌ-শক্তির আধিপত্য ধরে রেখেছে।
কিন্তু পাকিস্তানের এই নতুন টেস্ট—যদি এটি সত্যিই হাইপারসনিক মিসাইল হয়—তাহলে ভারতের জন্য তা একটি কৌশলগত সতর্কবার্তা।
ভারতের নৌবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে ভারত মহাসাগরে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে, বিশেষ করে আন্দামান-নিকোবর ঘাঁটি থেকে শুরু করে মালাবার মহড়া পর্যন্ত।
কিন্তু পাকিস্তান-চীন সামরিক সহযোগিতা এখন সেই আধিপত্যে ফাটল ধরানোর প্রয়াস নিচ্ছে।
চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তায় পাকিস্তান এখন কেবল ভূমি ও আকাশেই নয়, সমুদ্রভিত্তিক আক্রমণক্ষমতাও বাড়াচ্ছে।
গোয়াদার বন্দর, যেটি চীনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ নোড, সেখানে এই মিসাইল টেস্টের আয়োজনই তার প্রমাণ।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে পাকিস্তান যেন দক্ষিণ এশিয়ার সমুদ্রপথে “একটি বিকল্প সামরিক বাস্তবতা” গড়ে তোলার বার্তা দিচ্ছে—যা সরাসরি ভারতের ইন্ডিয়ান ওশান ডমিনেন্স-কে চ্যালেঞ্জ করছে।
বাংলাদেশ-তুরস্ক সংযোগ: আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা
এদিকে, যখন পাকিস্তান সামুদ্রিক মিসাইল টেস্টের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখন বাংলাদেশের বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান তুরস্ক সফরে রয়েছেন।
তিনি তুর্কি প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কোম্পানি আসেলসান পরিদর্শন করেছেন।

আসেলসান বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের রাডার, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম এবং মিসাইল গাইডেন্স প্রযুক্তি তৈরি করছে।
বাংলাদেশ ও তুরস্কের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা যদি আরও গভীর হয়, তাহলে তা আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ভারসাম্যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
পাকিস্তানের এই মিসাইল টেস্ট কেবল একটি প্রযুক্তিগত প্রদর্শনী নয়—এটি একটি জিওস্ট্র্যাটেজিক বার্তা।
ভারতীয় নৌবাহিনীর দীর্ঘদিনের একক প্রভাব এখন বাস্তব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
চীন-পাকিস্তান সামরিক সহযোগিতা এবং ভারতের প্রতিরক্ষামূলক জবাবদিহি—দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা কাঠামোকে এক নতুন অনিশ্চিত অধ্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।

 
                         
         
         
        