 
                  নওগাঁয় এক বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারজিস আলম বলেন, কিছু উপদেষ্টার জন্য মৃত্যু ছাড়া কোনো ‘সেফ এক্সিট’ নেই। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও রাজনৈতিক দায়িত্বশীলতা নিয়ে তার এই বক্তব্য দেশে নতুন রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জাতীয় রাজনীতিতে যখন উপদেষ্টা পরিষদ ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, ঠিক সেই সময় নওগাঁ থেকে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে নওগাঁ জেলা শাখার এক সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যারা দায়িত্ব পালনে ভয় পান, তাদের জন্য মৃত্যু ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই।”
এই বক্তব্য নিছক রাজনৈতিক আবেগ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতার গভীর প্রতিফলন।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, নির্বাচন কমিশনের প্রতি অবিশ্বাস এবং দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালনকারী উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ—
সবকিছুর সংমিশ্রণে এই বক্তব্যে ফুটে উঠেছে এক ধরনের জনআকাঙ্ক্ষার ভাষা।
সারজিস আলমের বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে উঠে এসেছে নির্বাচন কমিশনকে ঘিরে প্রশ্ন।
তার মতে, কমিশন যদি আইনগতভাবে কোনো প্রতীকের অনুমোদনে বাধা না পায়, তবুও “কাউকে খুশি করতে” সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে—তাহলে সেটি স্বেচ্ছাচারিতা।
এই বক্তব্যের ভেতর দিয়ে সারজিস একদিকে যেমন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবের ইঙ্গিত দিয়েছেন,
তেমনি কমিশনের সাংবিধানিক স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের আহ্বানও জানিয়েছেন।
নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় এনসিপির অবস্থান
নওগাঁর সভায় সারজিস আলম পরিষ্কারভাবে জানান, আওয়ামী লীগের “যেকোনো ভার্সন” বাংলাদেশে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে প্রাসঙ্গিক নয়।
অর্থাৎ, তিনি শুধু আওয়ামী লীগ নয়—তার বিভিন্ন রাজনৈতিক ছায়াগোষ্ঠীকেও ইঙ্গিত করেছেন।
এই অবস্থান থেকে বোঝা যায়, এনসিপি এখন নিজেদের একটি “শুদ্ধ বিকল্প রাজনীতি”র ধারক হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে, যেখানে তারা দাবি করছে—
বাংলাদেশের ভালো মানুষরা একত্রিত হয়ে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারেন।
সারজিস আলমের এই বক্তব্যে স্পষ্ট বার্তা রয়েছে—রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনে গাফিলতি বা ভয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এটি কেবল উপদেষ্টা পরিষদ নয়, পুরো প্রশাসনিক কাঠামোকে উদ্দেশ্য করে বলা এক রূঢ় সতর্কবার্তা।
“সেফ এক্সিট” বলতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন—
যারা দায়িত্ব থেকে পালাতে চান, ইতিহাস তাদের ছাড়বে না।
দেশের মানুষ এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের আদালত তাদের বিচার করবে।
সারজিস আলমের এই বক্তব্য নিছক দলীয় সমাবেশের বক্তব্য নয়; এটি এক ধরনের রাজনৈতিক ম্যানিফেস্টো—
যেখানে তিনি দায়িত্ব, ভয়, ও জনগণের বিচারের ধারণাকে একত্র করেছেন।
তার এই ‘সেফ এক্সিট’ তত্ত্ব হয়তো আগামী দিনের রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন দৃষ্টিকোণ যোগ করবে,
বিশেষত এমন এক সময় যখন বাংলাদেশ রাজনীতিতে দায় এড়ানোর সংস্কৃতি যেন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

 
                         
         
         
        