নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ড্রামের ভেতর অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দেখা দিয়েছে নতুন আতঙ্ক। এটি কি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, নাকি গুমের নতুন কৌশল? বিশ্লেষণ জানাচ্ছে, অপরাধের ধরন এখন আরও গোপন, নৃশংস ও সংগঠিত।
নারায়ণগঞ্জ আবারও আলোচনায়—তবে এবার কোনো রাজনৈতিক কারণ নয়, বরং এক শীতল করা অপরাধের ঘটনায়। ফতুল্লার তক্কারমাঠ এলাকায় পরিত্যক্ত জায়গায় একটি প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ। স্থানীয়দের সন্দেহ থেকেই বিষয়টি ফাঁস হয়, আর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ড্রাম খুলে দেখতে পায় ভেতরে গলিত অবস্থায় এক মানুষের দেহ।
এই দৃশ্য যেন কোনো অপরাধমূলক সিনেমার কাহিনি নয়, বরং বাস্তব বাংলাদেশের এক ভয়াবহ চিত্র—যেখানে মানুষ গুম, হত্যা ও লাশ গোপন করার নতুন কৌশল দেখতে পাচ্ছে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনাস্থলের ধরন ও লাশ গোপনের পদ্ধতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, হত্যাকারীরা শুধুই হত্যায় থেমে থাকেনি—বরং প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে নিখুঁতভাবে।
ড্রাম, সিল করা ঢাকনা, নির্জন জায়গা—সবকিছুই পরিকল্পিত অপরাধচক্রের ছাপ বহন করছে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘লাশ গুম’ বা ‘ড্রামে লাশ’ রাখার ঘটনাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ঋণ, ব্যবসা-বিরোধ, প্রেমঘটিত সম্পর্ক বা রাজনৈতিক প্রতিশোধের সূত্রে ঘটেছে।
তবে এবারও একই ধারা কি দেখা যাচ্ছে?
নাকি এটি কোনো বড় অপরাধচক্রের অংশ, যারা নারায়ণগঞ্জকে আবারও তাদের লাশগোপনস্থল বানিয়েছে?
নারায়ণগঞ্জ: অপরাধের ভূগোল
বাংলাদেশের শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জ একসময় রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য কুখ্যাত ছিল।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ অঞ্চলটি চোরাচালান, মাদক ও গ্যাং অপরাধের হটস্পটে পরিণত হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালালেও অপরাধীদের নেটওয়ার্ক বারবার রূপ বদলে ফিরছে।
ড্রামের ভেতর লাশ উদ্ধারের ঘটনা যেন সেই ভূগোলেরই এক ভয়ানক স্মারক—অপরাধ এখন আরও সংগঠিত, পরিকল্পিত এবং প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে।
যদিও পুলিশ প্রাথমিকভাবে একে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলছে, তবে গুমের ছায়া একে ঘিরে ঘন হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ‘নিখোঁজ’ হওয়া কয়েকজনের পরিবার নারায়ণগঞ্জ ও এর আশপাশে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নতুন করে থানায় যোগাযোগ করছে।
নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তের পরই হয়তো জানা যাবে, এটি কোনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের ফল, না কি বড় কোনো গুম সিন্ডিকেটের অংশ।
এই ঘটনাটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়—এটি এক ভয়ানক সামাজিক বার্তা বহন করে।
অপরাধীরা এখন জানে, কেবল হত্যা নয়, লাশ লুকানোও ‘একটি কৌশল’।
এভাবে সমাজে ভয়ের সংস্কৃতি জিইয়ে রাখা যায়। আর সাধারণ মানুষ জানে, পরের ড্রামটি হয়তো কারও প্রিয়জনেরই হতে পারে।
ফতুল্লার তক্কারমাঠে ড্রামে লাশ উদ্ধারের এই ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে—বাংলাদেশে অপরাধ এখন আর কেবল সংখ্যার খেলা নয়, এটি অদৃশ্য হাতের পরিচালিত এক নৃশংস যন্ত্রণা।
নিহতের পরিচয় জানা গেলে হয়তো এর নেপথ্যে থাকা শক্তিগুলোর মুখোশ উন্মোচিত হবে।
কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—আর কত লাশ ড্রামের ভেতর থেকে বের হবে, তার আগে আমরা সমাজ হিসেবে জেগে উঠব?
