অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ কোনো ইসলামিক রাষ্ট্র নয়, বরং একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র। তাঁর বক্তব্য রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে নতুন বার্তা বহন করছে, বিশেষত নির্বাচনের প্রাক্কালে সম্প্রীতির রাজনীতিতে এর তাৎপর্য গভীর।
রাঙামাটির পাহাড়ি জনপদে উচ্চারিত এক বক্তব্য এখন জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেনের স্পষ্ট ঘোষণা—“বাংলাদেশ কোনো ইসলামিক রাষ্ট্র নয়, এটি একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র।” এই বক্তব্য শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণেই নয়, বরং চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
‘সম্প্রীতি সমাবেশ’-এ প্রদত্ত বক্তব্যে ড. খালিদ হোসেন বলেন, “আমাকে সব ধর্মীয় স্থানে যেতে হবে, এটি আমার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।”
তাঁর এই বক্তব্য রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে পুনরায় সামনে নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশের সংবিধান ১৫তম সংশোধনের পর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” সংরক্ষিত থাকলেও রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোয় ধর্মনিরপেক্ষতা একটি অনিবার্য মূলনীতি হিসেবে থেকে গেছে।
উপদেষ্টার বক্তব্যে সেই সাংবিধানিক ভিত্তির প্রতি আনুগত্যের ইঙ্গিত স্পষ্ট।
এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সরকার বারবার “সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ” নির্বাচনের আশ্বাস দিচ্ছে।
ধর্ম উপদেষ্টার মন্তব্যটি তাই শুধু ধর্মীয় সম্প্রীতির আহ্বান নয়,
বরং রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান ও নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের নীতিগত অবস্থানের প্রতিফলন বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ধর্ম ও রাজনীতির সমীকরণ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম বরাবরই সংবেদনশীল একটি উপাদান।
জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো একদিকে নির্বাচনী রাজনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা করছে,
অন্যদিকে নতুন সরকারের “সেক্যুলার রাষ্ট্র” ধারণা তাদের জন্য রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
ড. খালিদ হোসেনের বক্তব্যে “আমি একক কোনো ধর্মের উপদেষ্টা নই”—এই ঘোষণা ধর্মনিরপেক্ষ প্রশাসনিক নীতির প্রতি সরকারের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রচিত্র এখন এক সংবেদনশীল পর্যায়ে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মন্দির হামলার ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে সরকারের ধর্ম উপদেষ্টার এমন বক্তব্য বিদেশি কূটনৈতিক মহলে একটি ইতিবাচক বার্তা পাঠাচ্ছে—যে বাংলাদেশ তার সংবিধানসম্মত সেক্যুলার চরিত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে অটল।
ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেনের বক্তব্য মূলত একটি আত্মবিশ্বাসী ও সেক্যুলার রাষ্ট্রের ঘোষণা।
এটি ধর্মীয় সম্প্রীতির রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বাংলাদেশ যদি সত্যিই তার সংবিধানের আদর্শ—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা—অটুট রাখতে চায়, তবে এমন অবস্থানই হতে পারে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি।
