 
                  অনির্বাচিত সরকারের প্রধান হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। ইতালির এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিক বৈধতা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক রোম সফর ঘিরে তৈরি হয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিতর্ক। সরকারের পক্ষ থেকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের অনুরোধ করা হলেও, ইতালি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়েছে, অনির্বাচিত সরকারের প্রধানের সঙ্গে এই মুহূর্তে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক করতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী আগ্রহী নন।
ইতালির কূটনৈতিক অবস্থান: ‘অনির্বাচিত’ ফ্যাক্টর
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোমে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়ে ড. ইউনূস ও জর্জিয়া মেলোনির মধ্যে বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছিল।
চিঠির জবাব না পাওয়ায় অক্টোবরের ২ তারিখে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ টি এম রোকেবুল হক ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গেলে তাকে মৌখিকভাবে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
ইতালির এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বহন করছে।
একটি জি-৭ সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন সরাসরি প্রত্যাখ্যান স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে,
–বাংলাদেশের অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ বৈধতা অর্জন করতে পারেনি।
ইতালীয় কর্মকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন যে,
এই প্রত্যাখ্যান দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না
এবং বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার এলে তাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয় বিবেচনা করা হবে।
তবে, কার্যত এটি দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও প্রোটোকলের ক্ষেত্রে একটি বড় ধাক্কা।
প্রেস সচিবের ব্যাখ্যা এবং সংবাদ সংশোধনের তাগিদ
এই কূটনৈতিক অস্বস্তির মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ভুল সংবাদ প্রচারের বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
কিছু সংবাদমাধ্যম ও রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা (বাসস) ভুলভাবে প্রচার করেছিল যে ড. ইউনূস রোম সফরে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।
প্রেস সচিব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন,
তিনি কেবল বলেছিলেন যে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরামে যোগ দেবেন
এবং কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করবেন, কিন্তু মেলোনির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলেননি।
প্রেস সচিবের এই ব্যাখ্যা একদিকে যেমন বিভ্রান্তি দূর করেছে,
অন্যদিকে তেমনি দেখায় যে, সরকারের অভ্যন্তরেও যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব থাকতে পারে।
তার আশা প্রকাশ, সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদন সংশোধন করবে।
বিশ্লেষণের সারসংক্ষেপ
ইতালির এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি কড়া বার্তা। এটি স্পষ্ট করে দিল যে, ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও, সরকারপ্রধান হিসেবে তার অবস্থান নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের মানদণ্ডে পরীক্ষিত না হওয়ায় তিনি উচ্চপর্যায়ের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক প্রোটোকল লাভে ব্যর্থ হচ্ছেন। বাংলাদেশের দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া কেন আন্তর্জাতিক সমর্থন ও স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য, এই ঘটনা তারই প্রমাণ।

 
                         
         
         
        