 
                  ড. ইউনূস সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের ৩১ নেতাকর্মীর রহস্যজনক কারামৃত্যুতে উন্মোচিত হচ্ছে ‘জাকার্তা মেথড’-এর ছায়া। ইতিহাসে এটি স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের নজির।
জাকার্তা মেথডের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ! বাংলাদেশে আজ যে ভয়াবহ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে—তা স্বাধীনতার পর কোনো সময় দেখা যায়নি। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের ৩১ জন নেতাকর্মীর কারাগারে মৃত্যু ঘটেছে, যা রাষ্ট্রীয় নির্যাতন ও ‘জাকার্তা মেথড’–এর নিদর্শন বলেই বিশ্লেষকরা দেখছেন।
‘জাকার্তা মেথড’ শব্দটি এসেছে ইন্দোনেশিয়ার ১৯৬৫-৬৬ সালের বামপন্থী গণহত্যা থেকে, যেখানে হাজার হাজার মানুষকে আটক, নির্যাতন ও গোপনে হত্যা করা হয়।
আজ সেই একই পদ্ধতির প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের কারাগারে।








৩১টি মৃত্যু: একই ধাঁচে সাজানো গল্প
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৩১ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মৃত্যু—সবগুলোই ‘অসুস্থতা’ বা ‘হার্ট অ্যাটাক’-এর গল্পে মোড়ানো।
তবে নিহতদের পরিবার বলছে, সবাই ছিলেন নির্যাতনের শিকার।
কিছু উদাহরণ:
- এলাহি সিকদার (১৯) — গোপালগঞ্জের কর্মী, ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার, ৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যু।
- শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও সোহরাব হোসেন আপেল (৩৫) — গাইবান্ধা, গ্রেপ্তারের একদিন পর মৃত্যু।
- আলিমুজ্জামান চৌধুরী (৫৮) — মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের নেতা, কারাগারে অপমানজনক নির্যাতন।
- নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (৭৫) — সাবেক মন্ত্রী, ২৫ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার, ২৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যু।
আওয়ামী লীগের দাবি—এই মৃত্যুগুলো পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডেরই ধারাবাহিকতা।
মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদন: নির্মম বাস্তবতা
জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশ ইন ফ্রান্স (JM-BF) জানিয়েছে, গত এক বছরে ৬১টি হেফাজতে মৃত্যু ঘটেছে—যার অধিকাংশই আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) জানিয়েছে, এই মৃত্যুগুলো সরকারী বাহিনীর নির্যাতন ও চিকিৎসা অবহেলার সরাসরি ফলাফল।
তারা সতর্ক করেছে—“এই প্রবণতা চলতে থাকলে এটি বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় গণহত্যার নতুন অধ্যায় হয়ে দাঁড়াবে।”
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না নতুন দুঃস্বপ্ন?
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের পর আর কখনো বাংলাদেশে এভাবে রাজনৈতিক বন্দিদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
তবে আজকের ঘটনাগুলো ভয়াবহভাবে সেই কালো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য অনুযায়ী, ইউনূস প্রশাসনের পর হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে—এবং সবই এক রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও তদন্তের দাবি
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেছেন,
“এটি ফ্যাসিবাদের নতুন রূপ—আমাদের দলকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা।”
অন্যদিকে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
HRW-এর এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস মন্তব্য করেছেন—
“বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি ভেঙে দিয়েছে। এখনই স্বাধীন তদন্ত কমিশন না গঠন করলে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে।”
ইতিহাসের নতুন খাপড়া ওয়ার্ড?
এই হত্যাযজ্ঞ শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় মদদে সংঘটিত এক সুপরিকল্পিত অভিযানের চিত্র।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ১৯৫০-এর খাপড়া ওয়ার্ড বা ১৯৭৫ সালের জেল হত্যাকাণ্ডের আধুনিক সংস্করণ—
“জাকার্তা মেথড”-এর ছায়ায় নির্মিত এক নতুন বিভীষিকা।
বাংলাদেশের জনগণ আবারও এক প্রশ্নের মুখে—
এই রাষ্ট্র কি স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করছে, নাকি নতুন এক অন্ধকার যুগে প্রবেশ করছে?

 
                         
         
         
        