 
                  আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার চূড়ান্ত লড়াইয়ে তিনি মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করতে প্রস্তুত। তার এই বক্তব্য কি আত্মত্যাগের আহ্বান, নাকি নতুন রাজনৈতিক কৌশলের ইঙ্গিত।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক-এর সাম্প্রতিক বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রয়োজনে মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করতে প্রস্তুত। এই ঘোষণা কেবল আবেগের প্রকাশ নয়, বরং এটি এক রাজনৈতিক কৌশলগত বার্তা, যা দেশের চলমান অন্তর্বর্তীকালীন অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে গভীর তাৎপর্য বহন করছে।
নানক তার বক্তব্যে বলেন, “আমি কোনো ভীত ব্যক্তি নই, আমি কৌশলগত কারণে স্থান পরিবর্তন করেছি।”
এই মন্তব্য রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
কারণ, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী গোপনে দেশত্যাগ বা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
নানকের এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ‘পলায়ন নয়, পুনর্গঠন’—এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।
এটি মূলত সরকারের শক্তি প্রদর্শনের বিপরীতে একটি প্রতিরোধধর্মী রাজনীতির সূচনা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তিনি নিজের সম্ভাব্য আত্মত্যাগকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, “আমি ভাবলাম, ’৭১-এ যে নানকের মৃত্যু হয়নি, সে নানক এখন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন দেবে।”
এই বক্তব্য কেবল ব্যক্তিগত দৃঢ়তার প্রকাশ নয়, বরং একটি নতুন জাতীয়তাবাদী আবেগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা।
দলীয় কর্মীদের মনোবল পুনরুদ্ধারে এই ধরনের আবেগঘন ভাষা ঐতিহাসিকভাবে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে — বিশেষ করে আন্দোলনের প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে।
ইউনূস সরকার ও দমন-নীতির প্রশ্ন
নানক অভিযোগ করেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের ওপর দমন-নীতি চালাচ্ছে।
তার ভাষ্যমতে, জামায়াত-শিবির ও বিএনপি রাষ্ট্রীয় শক্তির ছায়ায় গুম, খুন, ও কারাবন্দিদের হত্যায় জড়িত।
এই অভিযোগের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ এখন নিজেকে ‘অত্যাচারিত জাতীয় শক্তি’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে, যা রাজনৈতিকভাবে পুনরুদ্ধারের একটি কৌশলগত মোড়।
নানক বলেন, “একটা পথ ছিল অন্যায়ের সঙ্গে আপস করা, আরেকটা পথ ছিল কৌশলে সরে গিয়ে ন্যায়ের জন্য সংগঠিত হওয়া।”
এই বক্তব্য মূলত আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে চলমান পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার ইঙ্গিত।
বিশ্লেষকদের মতে, নানকের এই বার্তা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং দলীয় কর্মীদের মানসিকভাবে একত্র করার একটি আহ্বান।
এটি ভবিষ্যতে বিদেশে অবস্থানরত দলীয় নেতৃত্বের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের ভূমিকা প্রস্তুত করতে পারে।
জাহাঙ্গীর কবির নানকের এই বক্তব্য নিছক আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়।
এটি একদিকে রাজনৈতিক আত্মত্যাগের ঘোষণা, অন্যদিকে কৌশলগত পুনর্গঠনের রূপরেখা।
বাংলাদেশের বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নানকের এই অবস্থান স্পষ্ট করে যে,
আওয়ামী লীগ এখনো রাজনীতির কেন্দ্র থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন নয়, বরং নতুনভাবে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই ঘোষণার মাধ্যমে নানক শুধু নিজের অবস্থান নয়, পুরো দলের এক আদর্শিক ও কৌশলগত প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছেন—
যেখানে মৃত্যু নয়, পুনর্জাগরণই চূড়ান্ত লক্ষ্য

 
                         
         
         
        