জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী সতর্ক করেছেন— আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে তা বাংলাদেশের ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ভোট হবে, এমনকি ২০১৪ সালের থেকেও খারাপ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসন্ন নির্বাচনের বৈধতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্র নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সাম্প্রতিক মন্তব্যে এই বিতর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। তিনি বলেছেন— “আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে যদি নির্বাচন হয়, তবে তা বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম নিকৃষ্ট নির্বাচন হবে— এমনকি ২০১৪ সালের একতরফা ভোটের চেয়েও খারাপ।”
এর আগে বিভিন্ন সময় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ নেয়নি, আর আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে ক্ষমতায় আসে।
সেই ভোটে নির্বাচনী অংশগ্রহণ ছিল কম, ১৫৩ আসনে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায়।
জাতীয় পার্টি তখন তথাকথিত “বিরোধী দল” হিসেবে সংসদে বসেছিল, যদিও তারা সরকারের অংশীদারও ছিল।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী এখন সেই সময়ের ব্যর্থতার কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন—
“আমরা তখন বলেছিলাম, একতরফা ভোটের সরকার টিকবে না, এখনো মনে করি, টিকবে না।”
এ বক্তব্য শুধু অতীতের রাজনৈতিক অবস্থান নয়, বরং বর্তমানের প্রেক্ষাপটে একটি সতর্ক বার্তা—
যদি একই ভুল পুনরায় হয়, তবে দেশ আরও গভীর রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়বে।
শামীম হায়দার পাটোয়ারীর মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন এমন কোনো নতুন শক্তি তৈরি হয়নি যারা জাতীয় স্তরে বিকল্প হয়ে উঠেছে।
তিনি এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ, ইসলামিক দলগুলোর সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন।
অর্থাৎ, রাজনৈতিক বাস্তবতায় এখনো আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া একটি নির্বাচনের বৈধতা এবং রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব।
এই অবস্থায়, যদি দুটি বড় শক্তি— একদিকে আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে জাতীয় পার্টি— উভয়কেই বাইরে রাখা হয়, তাহলে নির্বাচনের চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
বিএনপির সামনে দ্বিধা
একটি অস্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি এখন মূল সিদ্ধান্তের মুখে— তারা কি এই নির্বাচনে অংশ নেবে, নাকি বর্জনের পথে যাবে?
শামীমের মতে,
“একটা বড় অংশকে বাদ দিয়ে যখন ভোট করা হবে, বিএনপির মতো দল সেই ভোটে সম্মতি দেওয়া ঠিক হবে না।”
অর্থাৎ তিনি পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, এমন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ তার রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে বিভাজন আরও বাড়াবে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে যদি এমন একটি নির্বাচন হয়, যেখানে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি উভয়ই অনুপস্থিত, তাহলে—
রাজনৈতিক বৈধতা হারাবে নির্বাচনটি
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গণতন্ত্রের সংকট হিসেবে চিহ্নিত হবে
দেশে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা তৈরি হবে
বিরোধী দলগুলো পরস্পরের ওপর দায় চাপানোর রাজনীতি শুরু করবে।
শামীম হায়দারের মন্তব্যে এই উদ্বেগ স্পষ্ট—
তিনি একদিকে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিচ্ছেন, অন্যদিকে নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক সতর্ক ইঙ্গিত রেখে দিচ্ছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এক সূক্ষ্ম মোড়ে দাঁড়িয়ে।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া একটি নির্বাচন কেবল বৈধতা সংকটই তৈরি করবে না—
তা দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে।
যেমন শামীম হায়দার সতর্ক করেছেন—
“এই দুটি দলকে বাদ দিয়ে ভোট হলে, দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি আসবে।”
এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে বর্জন নয়, বরং সমঝোতার পথ খোঁজা, যাতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা পায় এবং নতুন করে কোনো “একতরফা ভোটের ইতিহাস” না তৈরি হয়।
