 
                  ভূমিকা
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় জাতিসংঘের মাসিক বরাদ্দ একসময় ১২ ডলার ছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরের আগে এই বরাদ্দ কমিয়ে ৬ ডলার করা হয়। পরে, তার পুনরায় সফরের সময় এই বরাদ্দ পূর্বের ১২ ডলারে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে দুঃখজনকভাবে, এই পুনর্বহালকেই “বরাদ্দ বৃদ্ধি” বলে প্রচার করা হয়েছে।
প্রশ্ন ওঠে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া না হলে কিংবা তাদের মানবিক সহায়তা যথাযথভাবে নিশ্চিত না করলে, হঠাৎ করে রাখাইন রাজ্যে কেন মানবিক সহায়তার প্রয়োজন দেখা দিলো? আরও উল্লেখযোগ্য হলো, এখানে “করিডোর” স্থাপনের পরিকল্পনার ইঙ্গিত রয়েছে, যা গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের আভাস দেয়।
ইতিহাসের নির্মম পুনরাবৃত্তি
১৭৫৭ সালের ইতিহাস আমাদের আজকের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। ন্যায়পরায়ণ শাসক নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করতে, তখন তার বিরুদ্ধে দুটো গুরুতর অপবাদ ছড়ানো হয়েছিল: তিনি নাকি অপশাসক এবং ধর্মীয়ভাবে কট্টর শিয়া। অথচ ইতিহাস সাক্ষী, নবাবের পতনের অন্যতম কুশীলব মীরজাফর নিজেও ছিলেন শিয়া মুসলিম। ইতিহাসের নির্মমতা এখানেই যে, বিশ্বাসঘাতকরা নিজেরাই ছিল একই আদর্শের অংশ, কিন্তু নিজেদের স্বার্থে অন্যায় অপবাদ ছড়িয়েছিল।
নবাবের পতনের পর বাংলার মানুষের ওপর ২০০ বছরের জন্য শোষণের ইতিহাস রচিত হয়। “ব্রিটিশ সুশাসন” নামক ভ্রান্ত ধারণার আড়ালে বাংলার মাটিতে মাছের লেজের চাবুক দিয়ে ইতিহাস লিখে নেওয়া হয়েছিল।
ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার করাল গ্রাস
ব্রিটিশ শাসনামলে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান — বাংলার সব ধর্মের মানুষ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু ইতিহাস কি বলে যে, এই দাঙ্গায় কোনো ব্রিটিশ নাগরিক মারা গিয়েছিল? বাস্তবতা হলো, ব্রিটিশরা ধর্মের বিভাজনকে হাতিয়ার করে আমাদের শাসন করেছে, আর আমরা রক্তের মূল্য দিয়েছি।
রোহিঙ্গা সংকট, রাখাইনে মানবিক সহায়তার নামে করিডোর স্থাপনের পরিকল্পনা এবং ইতিহাসের বিশ্বাসঘাতকতার শিক্ষা — সবকিছুই আজ আমাদের গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে, নিজেদের স্বার্থ ও পরিচয়ের প্রতি সজাগ থাকতে হবে, নচেৎ আবারও আমরা ইতিহাসের নির্মম পুনরাবৃত্তির শিকার হবো।

 
                         
         
         
        