বাংলাদেশে ইউটিউব চ্যানেল হ্যাকের মাধ্যমে কপিরাইট স্ট্রাইকে সমালোচনামূলক কনটেন্ট সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। সরকার সমালোচকরা টার্গেট হচ্ছেন বলে অভিযোগ।
ঢাকা, ৩০ মে ২০২৫:
সম্প্রতি বাংলাদেশে ইউটিউব চ্যানেল হ্যাক হওয়ার প্রবণতা মারাত্মকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, ধর্ম ও সমাজ নিয়ে সমালোচনামূলক কনটেন্ট তৈরি করেন, তারা ক্রমাগত কপিরাইট স্ট্রাইকের মাধ্যমে টার্গেট হচ্ছেন। এমন অভিযোগ করছেন একাধিক ভুক্তভোগী ইউটিউবার ও ব্লগার।
🛡️ কপিরাইট স্ট্রাইকের নামে ‘ডিজিটাল সন্ত্রাস’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হ্যাকাররা ‘কপিরাইট ক্লেইম’ বা ‘ফলস স্ট্রাইক’ দিয়ে ইউটিউবের অ্যালগরিদমকে ব্যবহার করে একই ব্যবহারকারীর তিনটি স্ট্রাইকে চ্যানেল সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার ব্যবস্থা করছে।
এসব চ্যানেলের অধিকাংশই সরকারের কার্যক্রম, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সরব।








একজন ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানান:
“আমার চ্যানেলটি তিনটি স্ট্রাইকে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আমি আরেকটি চ্যানেল খুলি। সেখানেও একইভাবে একই ব্যক্তি ‘নাহিদ মিয়া’ আবারও তিনটি কপিরাইট স্ট্রাইক দিয়ে সেটিও বন্ধ করে দেয়।”
এই ‘নাহিদ মিয়া’ নামে এক হ্যাকার পরিচিতির জিমেইল আইডি— hackerteamnahid@gmail.com —এর মাধ্যমে এসব কপিরাইট স্ট্রাইক দেওয়া হচ্ছে বলে বহু কনটেন্ট ক্রিয়েটর অভিযোগ তুলেছেন।
📉 একতরফা ইউটিউব অ্যালগরিদম ও ইউজার সাপোর্টের অভাব
ইউটিউবের কপিরাইট অ্যালগরিদম অনেকাংশেই অটোমেটেড হওয়ায় ভুয়া কপিরাইট ক্লেইম যাচাই না করেই চ্যানেল ডিলিট করে দেয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ইউটিউবের কাছে বারবার রিপোর্ট করেও সঠিক জবাব বা প্রতিকার মেলেনি।
এতে করে প্রশ্ন উঠছে—
- ইউটিউবের এলগরিদম কি হ্যাকারদের কাছে দুর্বল হয়ে পড়েছে?
- সরকার কি পরোক্ষভাবে বা ইঙ্গিতে এই দমনযন্ত্রকে ব্যবহার করছে?
🧠 রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হ্যাকিং?
অনেকেই মনে করছেন, এই হ্যাকিং কৌশল শুধু ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব বা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং এর পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং মতপ্রকাশের অধিকার দমন করার স্পষ্ট লক্ষণ রয়েছে। কনটেন্ট নির্মাতারা বলছেন, দেশে এখন মুক্তমতের একমাত্র প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব, এবং এটাকেই ধ্বংস করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে।
একজন ব্লগার বলেন:
“প্রিন্ট মিডিয়া বা টিভিতে তো আমাদের জায়গা নেই, ইউটিউবই একমাত্র আশ্রয় ছিল। এখন এটাও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।”
📉 ব্যক্তিগত তথ্য ঝুঁকিতে
অনেক হ্যাকার শুধু চ্যানেল বন্ধ করে থেমে থাকছেন না, বরং ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার আশঙ্কাও করছেন অনেক কনটেন্ট নির্মাতা। গুগল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সংযুক্ত ড্রাইভ, জিমেইল, এমনকি ব্যাঙ্ক তথ্যও হয়তো হ্যাকারদের কাছে যাচ্ছে।
এই প্রবণতা নিঃসন্দেহে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সাইবার নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল অধিকার—এই তিনটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে বড় ধরনের সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদি ইউটিউব ও সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
