২০২৫ সালের জুলাই মাস, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াল ও কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রের হৃদয়ে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়া, থানায় হামলা, আগুন সন্ত্রাস ও সংঘবদ্ধ হত্যাকাণ্ড—সব মিলিয়ে এটি ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের এক নৃশংস পরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ। এই ঘটনাগুলো কোনো স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলনের অংশ নয় বরং একটি সুপরিকল্পিত, বহুমাত্রিক অভ্যুত্থান প্রক্রিয়ার ছক।
সম্প্রতি ইউরোপের একটি নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমে গোপন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এনসিপির এক সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি দাবি করেন, সরকার বা পুলিশ নয়, বরং আন্দোলনকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও মানবিক রূপ দিতে বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারান ২১৩ জন। পুলিশ গুলিতে মারা যান মাত্র ৭ জন। অর্থাৎ, জনমনে সরকারবিরোধী ক্ষোভ তৈরি ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার উদ্দেশ্যেই এই ‘মৃত্যুকৌশল’ প্রয়োগ করা হয়।
কারা ছিলেন এই রক্তাক্ত নীলনকশার অংশ?
এই তথ্যমতে, ৫টি চক্র ছিল সরাসরি জড়িত—
- শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডার: ৮০ জন
- হিজবুত তাহরীর সদস্য: ৬০ জন
- হেফাজতের সমন্বয়কারী: ২২ জন
- এনসিপির কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের নেতা: ৪০ জন
- সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ১১ জন কর্মকর্তা
তাদেরকে একত্রে একটি “অপারেশনাল টাস্কফোর্স”-এর আওতায় আনা হয়, যারা আলাদা সেল গঠন করে দায়িত্ব ভাগ করে নেয়।
জুলাইয়ের সেই ভয়াল সপ্তাহে রাজধানীর অন্তত ১৪টি থানা ও চট্টগ্রামে ২টি গুরুত্বপূর্ণ থানা একযোগে আক্রমণের শিকার হয়। পূর্ব-পরিকল্পিত এই হামলায় লক্ষ্য ছিল—
- অস্ত্রভাণ্ডার দখল
- গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ধ্বংস
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া
- জনমনে ভয় ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি
প্রতিটি হামলা ছিল সময়, স্থান ও লক্ষ্য নির্দিষ্ট করে সমন্বিতভাবে পরিচালিত। এই ঘটনায় সরাসরি ও পরোক্ষভাবে আহত হন ৫০০-এর বেশি পুলিশ ও সাধারণ মানুষ। এমনকি ১২০০ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করার একটি তালিকাও গৃহীত হয়েছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ।
এনসিপির ওই নেতার অভিযোগ আরও বিস্ময়কর। তিনি দাবি করেন, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক ও আমেরিকার দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তা ছিল এই ষড়যন্ত্রে। বিশেষ করে ইউনুস সেন্টার ও কিছু বিদেশফেরত একাডেমিকদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে এই দূতাবাসগুলোর নির্দিষ্ট “লিংক পারসন” কাজ করতেন।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রভাষক, এনসিপির মিডিয়া টিম এবং এনজিও সংস্থার কতিপয় কর্মী ছিলেন এই চক্রান্তের সমন্বয়কারী।
এই পরিকল্পনায় অন্যতম কার্যকর অস্ত্র ছিল—গুজব ও ডিজিটাল প্রপাগান্ডা। টেলিগ্রাম, ডার্ক ওয়েব ও এনক্রিপ্টেড গ্রুপে একযোগে গুজব ছড়ানো হয়:
- “সরকার গণহত্যা চালাচ্ছে”
- “বিদেশে আশ্রয় চাইতে প্রস্তুত হন”
- “বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকা ঘোষণা আসছে”
এই ভুয়া বার্তাগুলোকে সত্য প্রমাণ করতে আন্দোলনের ভিডিওকে এডিট করে ছড়ানো হয় আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে।
এই ঘটনা শুধুই একটি রাজনৈতিক সহিংসতা নয়, এটি ছিল একটি নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে একটি সহিংস ও ষড়যন্ত্রমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা। এ এক প্রকার ‘স্মার্ট কু’ (Smart Coup), যেখানে বুলেটের পাশাপাশি ব্যালট, গুজব, আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং কূটনৈতিক সংযোগ সব একত্রে ব্যবহার করা হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ড এবং ষড়যন্ত্রে জড়িত সব গোষ্ঠী, ব্যক্তি ও বিদেশি সংযোগকে আইনের আওতায় আনা এখন কেবল রাজনৈতিক নয়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রশ্ন।
শুধুমাত্র বিচার নয়, প্রয়োজন জাতিকে সত্য জানানোর—কোন অপশক্তি কতদূর পর্যন্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা ধ্বংসে লিপ্ত ছিল। ইতিহাসে এ ঘটনা যেন আর কখনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেই নিশ্চয়তা তৈরির দায়িত্ব এখন রাষ্ট্রযন্ত্রের।
