উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ব্যাগে আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন থাকার ঘটনায় উঠছে নানা প্রশ্ন। তার লাইসেন্স ছিল কি না, গণমাধ্যমে প্রতিবেদন গায়েব হওয়ার নেপথ্যে কারা? বিশ্লেষণ করলেন আমাদের প্রতিবেদক।
সম্প্রতি এক আলোচিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক উপদেষ্টা, আসিফ মাহমুদ। তার ব্যাগে একটি আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন পাওয়া যায়, যা মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তা কর্মীরা বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করলেও কিছু নির্ভরযোগ্য সূত্রে তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।
কিন্তু এর পরেই ঘটে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ঘটনা—অনেক জাতীয় গণমাধ্যম থেকে এই প্রতিবেদনগুলো হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যায়, কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল সম্পূর্ণরূপে ডিলিট করে দেয় আগের প্রকাশিত সংবাদ।
বাংলাদেশের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, বেসরকারি নাগরিকদের আগ্নেয়াস্ত্র বহনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন:
১. অবশ্যই বয়স ৩০ বছরের বেশি হতে হবে।
২. গত তিন অর্থবছরে তিন লক্ষ টাকা বা তার অধিক আয়কর প্রদান করতে হবে।
৩. সুনির্দিষ্ট ঝুঁকি বা নিরাপত্তা হুমকির যৌক্তিক প্রমাণ দিতে হবে।
৪. স্থানীয় থানার ছাড়পত্র ও গোয়েন্দা বিভাগের ক্লিয়ারেন্স লাগবে।
প্রশ্ন উঠছে, আসিফ মাহমুদ কি এসব শর্ত পূরণ করে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স নিয়েছেন?
এখন পর্যন্ত তার লাইসেন্স থাকার কোনো সরকারি কাগজপত্র বা ব্যাখ্যা সরকারি দপ্তর থেকে প্রকাশ করা হয়নি। ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ২৬ বছর ১০ মাস ১৮ দিন। আর আয়কর সংক্রান্ত তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এখনো প্রকাশ করেনি।
বাংলাদেশের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্রের যেকোনো অংশ (যেমন ম্যাগাজিন) বহন করাও দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রশ্ন হলো:
- ম্যাগাজিনটি যদি কারো লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের অংশ হয়, তাহলে সেটি কীভাবে আলাদা হয়ে উপদেষ্টার ব্যাগে গেল?
- সে যদি নিজের বলে দাবি করেন, তাহলে লাইসেন্স কই?
- না হলে এটি কি অবৈধ অস্ত্র চক্রের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত?
এই সব প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। অথচ বিষয়টি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত, তাই জনস্বার্থে উত্তর পাওয়া প্রয়োজন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদগুলো রাতারাতি গায়েব হয়ে যাওয়ায় জনগণের মনে গুঞ্জন শুরু হয়। প্রশ্ন জাগে:
মিডিয়ায় এই সেন্সরশিপ চালালো কে?সরকার কি প্রেসকে মৌন থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে? নাকি সরকারি উপদেষ্টাদের কেউ ফোন করে রিপোর্ট “ডিলিট” করার নির্দেশ দিয়েছে?
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যদি বাস্তবে থেকে থাকে, তাহলে এই ঘটনা সংক্রান্ত অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনগুলো কেন স্থায়ীভাবে মুছে ফেলা হলো? এভাবে সংবাদ গায়েব করাটা কি গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভকে লঙ্ঘন করা নয়?
দেশ যখন ক্রমাগত একটি নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক পরিবেশের দিকে এগোচ্ছে, তখন এই ধরনের ঘটনা চেপে যাওয়া নয়, জনসমক্ষে আনা জরুরি। আমরা জানি, কিছুদিন আগেই একইভাবে এক সাবেক মন্ত্রীর কনভয়ে আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অভিযোগ উঠেছিল, সেটিও ধামাচাপা পড়েছে।
এখানে প্রশ্ন ব্যক্তি আসিফ মাহমুদের নয়, প্রশ্ন রাষ্ট্রীয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার।
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সরকারি ব্যাখ্যার জন্য জনমত তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। আমাদের গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, এবং সচেতন পাঠকদের এই আলোচনা জিইয়ে রাখা প্রয়োজন, কারণ আমরা সবাই জানি—গণতন্ত্রে ক্ষমতার চেয়ে বেশি জরুরি জবাবদিহি।
