
ছাত্রী সংস্থার কার্যক্রম ধর্মীয় অনুশাসনের নামে রাজনৈতিক অপপ্রয়োগ, আদর্শিক বিভ্রান্তি ও নারীদের অপব্যবহারের আশঙ্কাজনক চিত্র তুলে ধরছে। বিস্তারিত জানুন এই অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনে।
অনলাইন ডেক্সঃ মুক্তিবার্তা৭১
বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘ছাত্রী সংস্থা’ নামে পরিচিত একটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় ও নৈতিকতার মুখোশ পরে নানা তৎপরতায় জড়িত। সাম্প্রতিক সময়ের নানা অভিযোগ ও ভুক্তভোগীদের বয়ান বলছে—এই সংস্থার আড়ালে চলছে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, অর্থ সংগ্রহ, প্রচারযন্ত্র তৈরি এবং নারীদের মানসিক ও সাংগঠনিক অপব্যবহার।
🔍 আদর্শ বনাম বাস্তবতা:
‘ইসলামী আদর্শ প্রচারের সংগঠন’ হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও ছাত্রী সংস্থা এখন অনেকটাই একটি রাজনৈতিক কাঠামোর সহায়ক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। সদস্যদের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক আনুগত্য তৈরির প্রচেষ্টা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্দিষ্ট দল বা মতাদর্শের পক্ষে প্রচার, এমনকি মাঠ পর্যায়ে অর্থ সংগ্রহ ও বিতরণ।
🎯 সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনীতি:
ভেতরের সূত্র বলছে, সদস্যদের কাছে সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে বলা হয় ‘এয়ানত’, ‘বায়তুল মাল’ কিংবা ‘দাওয়াতি কাজের জন্য অর্থ’ সংগ্রহ করতে। এ অর্থ একটি সাংগঠনিক কমিশন কাঠামোর ভিত্তিতে পরিচালিত হয়—যা কেবল ধর্মীয় উদ্দেশ্য নয়, রাজনৈতিক কর্মসূচি ও নেতাদের প্রভাব বিস্তারে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ।
⚠️ মানসিক চাপ ও আদর্শিক দাসত্ব:
সাবেক সদস্যরা জানান, ছাত্রী সংস্থার কর্মপদ্ধতি সদস্যদের মধ্যে অন্ধ আনুগত্য তৈরির দিকে বেশি মনোযোগী। অনেক সময় ধর্মীয় ব্যাখ্যা বিকৃত করে বলা হয়—নেতার প্রতি আনুগত্যই ঈমানের পরিচয়। মাওলানা মওদুদীর মতো বিতর্কিত মতবাদকে পাঠ্যপুস্তকের মতো শেখানো হয়। এই অপব্যাখ্যার কারণে নারীদের শরীর ও চিন্তা দুটোই নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
🚨 বিতর্কিত ‘ট্রেনিং’ ও বাস্তব চিত্র:
সংগঠনের ‘ট্রেনিং ম্যাটেরিয়াল’-এ এমন কিছু তথ্য থাকে, যেখানে মুতআ বিবাহ, দাসী ভোগ, নেতার জন্য আত্মত্যাগের কথা প্রশংসাসূচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। একাধিক শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, এই মতাদর্শের পেছনে ধর্ম নয়, বরং রাজনৈতিক কর্তৃত্ববাদ, নারীবিদ্বেষ এবং সহিংসতার কৌশল লুকিয়ে রয়েছে।
📌 রাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপপ্রচার:
আরেকটি আশঙ্কাজনক দিক হলো—সরকারবিরোধী প্রচারণা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি এবং আন্তর্জাতিক মুসলিম পরিচয়ের আড়ালে পাকিস্তানপন্থী অবস্থান। বিশেষভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক আইডি/পেজ পরিচালনার বিনিময়ে আর্থিক পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়, যা রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যকে উৎসাহিত করছে।
ছাত্রী সংস্থা একটি ধর্মীয় আদর্শভিত্তিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত হলেও বাস্তবে তাদের কার্যক্রম অনেকাংশেই রাজনৈতিক, বিভ্রান্তিকর এবং অপব্যবহারমূলক। নারীর প্রতি সম্মান ও ধর্মীয় চেতনা যখন কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীর হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তখন শিক্ষাঙ্গন ও সমাজ দুটোই হুমকির মুখে পড়ে।
এই ধরনের সংগঠনের বিরুদ্ধে জরুরি তদন্ত, সচেতনতা এবং শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছে সচেতন সমাজ।
