 
                  ২০২৫ সালের ইনভেস্টমেন্ট সামিটে মাত্র ৩১০০ কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি—যেখানে আগের বছরগুলোতে এসেছিল কয়েক বিলিয়ন ডলার। তাহলে এত ঢাকঢোল কেন? পুরনো প্রজেক্টকে নতুন বলে চালিয়ে দেওয়া ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা আড়াল করার এই প্রচেষ্টা আসলে কতটা কার্যকর?
লিখেছেন: প্রফেসর ড আরিফ খান | ১০ জুলাই ২০২৫; না, আর চুপ করে থাকা গেল না। ৩১০০ কোটি টাকার ইনভেস্ট এসেছে—এই নিয়ে যে হারে ঢাক-ঢোল পিটানো শুরু হয়েছে, দেখে মনে হচ্ছে যেন বাংলাদেশে সেকেন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন শুরু হয়ে গেছে! অথচ করোনার সময়, যখন সামিটগুলো ভার্চুয়ালি হচ্ছিল, তখন তো এর ১৫ গুণ বেশি ইনভেস্ট এসেছিল! তখন কিন্তু পতিত লীগ সরকারও ঠিক এভাবেই মাইক নিয়ে উন্নয়ন উন্নয়ন বলে চিৎকার করেছিল?
সমস্যা হল, এরা রাতদিন আগের সরকারের সমালোচনা করবে, অথচ যেই জিনিসটা নিজেরা করতে পারছে না—সেটা স্বীকার তো করবেই না, বরং গোপন রেখে চালাকের মত চালাবে।

পুরনো ঘর, নতুন রঙ
যে সরকার ১০০ টা ইকোনমিক জোন বানিয়ে রেখেছিল, এবারের সামিটে সেগুলোকেই আবার “প্রজেক্টর শো” করে বলছে—বাংলাদেশ ইনভেস্টের জন্য প্রস্তুত!
ভাই, পুরান বাড়ির প্লাস্টার তুলে নতুন বাড়ি বলে চালিয়ে দিলে মানুষ বুঝে না ভাবছেন?
বিজনেস ইনভেস্টমেন্ট আসবে, এটা প্রশংসনীয়—তবে আপনাদের এই কথিত “ইনভেস্টমেন্ট প্রোপাগান্ডা” আসলে ড্যামেজ কন্ট্রোল ছাড়া কিছু না।
কারণ বাস্তবে তো ৯৫টা ইকোনমিক জোন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেন? মানুষ বোকা না ভাই। মানুষ বুঝে যে ইনভেস্ট আসছে না বলেই এসব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
একজন সফল ব্যবসায়ী বলছিলেন টকশোতে—আমরা নিজেরাই দেশে ইনভেস্ট করতে ভয় পাই, বিদেশিরা করবে কীভাবে?
তারা তো আগে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করবে, তারপর ডিসিশন নেবে। তো আমরা কি ওদের বানিয়ে বানিয়ে বলব—“দেশে স্বর্গ নামিয়ে এনেছি”?
আর কেউ সমালোচনা করলেই আপনারা ফেসবুকে ‘আল-বটর-বাহিনী’ ছেড়ে দেন গালাগালির জন্য।
বাস্তবতা হচ্ছে, ইনভেস্টমেন্ট শুধু পোস্টার ছাপিয়ে আনা যায় না, হাওয়া দিয়ে অর্থনীতি চলে না—তার জন্য দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন আর আইনের শাসন।
আপনি যখন নিজের দেশের ব্যবসায়ীদেরকেই নিরাপত্তা দিতে পারছেন না, বর্ষবরণ উৎসব, হালখাতা, সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলো জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে তৌহিদী সন্ত্রাসে ছেয়ে দিচ্ছেন, তখন কোন বিদেশি পাগল হবে এসে এখানে ইনভেস্ট করতে?
আরও মজার বিষয়, ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগের সমর্থক ছাড়াও দেশের কমপক্ষে ৪০-৫০% মানুষকে আপনারা “ভিলেন” বানিয়ে ফেলেছেন
—কারণ তারা গনতন্ত্রের কথা বলে, তারা নির্বাচনের কথা বলে। অথচ এরাই আপনাদেরকে এখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে।
আপনারা এখনো আওয়ামী লীগের চিন্থিত অপরাধীর বিচার না করে, গণ হারে চিন্থিত সন্ত্রাসীদের জামিনে মুক্তি দিচ্ছেন।
এবং তাদেরকে পুর্নবাসন করে যাচ্ছেন। আবার বলেন দেশে একতা দরকার!
একটা সরকার যখন শত্রু তৈরি করে, তখন সে ইনভেস্টমেন্ট না, ইনসারজেন্সি পায়।
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মানুষ আর বোকা না। ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে যত ঢাকঢোলই পেটান না কেন, আগের ইনভেস্টের পরিমাণ লুকিয়ে রাখলে, এখনকারটা আরও ছোট হয়ে যাবে।
ইনভেস্টমেন্টের বাস্তব চিত্র:
নীচে ২০২০ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত সামিটে কত ইনভেস্ট এসেছিল তার সংক্ষিপ্ত হিসাব:
| সাল | বিনিয়োগ (USD) | 
|---|---|
| 2020 | $2.78 Billion | 
| 2021 | $3.2 Billion | 
| 2022 | $3.8 Billion | 
| 2023 | $3.5 Billion | 
| 2025 | $310 Million | 
এই টেবিলটি স্পষ্ট করে দেখায়—বর্তমান সরকার বিনিয়োগ নিয়ে যতই প্রচারণা চালাক না কেন, বাস্তবে বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে।
এই ফিগারটাই প্রমাণ করে—প্রচার যতই থাকুক, ইনভেস্টমেন্টের রিয়েলিটি কতটা ভোঁতা হয়ে গেছে।
নতুন কিছু বানান নাই, পুরান জিনিসগুলোকেই ঘষে-মেজে উপস্থাপন করছেন। কর্মসংস্থানের নতুন পরিকল্পনা নাই, বড় কোনো প্রজেক্টও নাই।

প্রফেসর ড আরিফ খান
সহ সভাপতি
শেখ হাসিনা সংগ্রাম পরিষদ

 
                         
         
         
        