বরিশালের গৌরনদীতে চিকিৎসককে হেনস্তার প্রতিবাদ করায় এক গৃহবধূকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। থানায় লিখিত অভিযোগ, নিন্দায় মুখর স্থানীয়রা।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক এক ঘটনা রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা ও পেশাগত দুর্নীতির একটি উৎকট চিত্র তুলে ধরেছে। ১১ জুলাই শুক্রবার, উপজেলার বিএনপি নেতা ও যুগ্ম আহ্বায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু একজন সরকারি চিকিৎসকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বিক্ষুব্ধ হলে, প্রতিবাদকারী এক নারী রোগীর অভিভাবককে প্রকাশ্যে থাপ্পড় মারেন—এমন অভিযোগ থানায় জমা পড়েছে।
প্রকাশ্যে এক নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি অবজ্ঞার এই ঘটনাটি স্থানীয় রাজনীতির এক ভয়ংকর দিককে উন্মোচিত করেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,
বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান মিন্টু চিকিৎসা নিতে যান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে।
সেখানে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা. প্লাবন হালদার তাঁকে একটি টিটেনাস ইনজেকশন নেয়ার পরামর্শ দেন।
পরামর্শ পছন্দ না হওয়ায় তিনি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছিঁড়ে টেবিলে ছুড়ে দেন এবং বেরিয়ে যাওয়ার সময় ডাক্তারের করা এক স্বগতোক্তিতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে এসে তাঁকে গালাগাল করতে থাকেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাধারণ রোগী বীথি আক্তার এই আচরণের প্রতিবাদ করলে মিন্টু ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে একাধিক থাপ্পড় মারেন।
বীথি জানান, “আমি শুধু বলেছি, ভাইয়া—এভাবে একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলা ঠিক না। তখনই উনি আমার ওপর হামলা করেন।”
এই ঘটনার পর শুক্রবার রাতেই গৌরনদী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী বীথি আক্তার।
থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
তবে শনিবার (১২ জুলাই) পর্যন্ত গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে কোনো আইনি পদক্ষেপ বা প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যায়নি,
যা স্বাস্থ্যসেবার পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের উদাসীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতিকে ইঙ্গিত দেয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান জানান, “ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
একজন রাজনৈতিক নেতার হাতে প্রকাশ্যে একজন নারী আক্রান্ত হওয়া এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি প্রকাশ্য অবজ্ঞা—এই দুটি দিক বাংলাদেশের গ্রামীণ স্বাস্থ্যখাত ও স্থানীয় রাজনীতির অপব্যবহারের একটি প্রতীক হয়ে উঠছে।
যেখানে একজন নাগরিক সচেতনভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শারীরিক হেনস্তার শিকার হন, সেখানে আইনের শাসন কতটা কার্যকর তা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ ধরনের নেতারা দলীয় পরিচয়ে বহুদিন ধরেই দাপট দেখিয়ে চলেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন প্রায়ই অক্ষম বা অনিচ্ছুক হয়ে পড়ে।
এই ঘটনার দায় শুধু বদিউজ্জামান মিন্টু নামক একজন রাজনৈতিক নেতার নয়; বরং একটি বৃহত্তর ব্যর্থ নৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থারও।
একজন সরকারি চিকিৎসকের পেশাগত পরামর্শকে অবজ্ঞা করে, জনসামক্ষে নারীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি যদি দলীয় ছত্রছায়ায় ধামাচাপা পড়ে যায়,
তাহলে ভবিষ্যতে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা এবং সাধারণ নাগরিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে পড়বে।
