গাজীপুরে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা তাহাজ উদ্দিন মোল্লাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাব ও বিচারিক প্রক্রিয়ার বিশ্লেষণ।
গাজীপুর মহানগরের রাজনীতির পরিচিত মুখ, কাশিমপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক তাহাজ উদ্দিন মোল্লা (৪৫) এখন কারাগারে। অভিযোগ ভয়ঙ্কর—দশম শ্রেণির এক কিশোরীকে অপহরণ ও ধর্ষণ। গত ৪ এপ্রিল সংঘটিত এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। আর এই মামলার অন্যতম আসামি হিসেবে আদালতের রায়ে তাহাজ উদ্দিনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
১৩ জুলাই, রোববার গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক তাহার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সরাসরি কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তাহাজ উদ্দিন গাজীপুর মহানগরের বারেন্ডা এলাকার বাসিন্দা, পিতার নাম কফিল উদ্দিন মোল্লা। কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় প্রায়ই আইনি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে বলে অভিযোগ উঠে থাকে। কিন্তু বর্তমান ঘটনায় আদালতের সিদ্ধান্ত এক ভিন্ন বার্তা বহন করে—নেতা বা কর্মী যেই হোক না কেন, ন্যায়বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে।
স্বেচ্ছাসেবক দল বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন। দলের একটি প্রভাবশালী ইউনিটের আহ্বায়ক যদি এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হন, তাহলে তা শুধু ব্যক্তি অপরাধ নয়, বরং পুরো রাজনৈতিক নৈতিকতার প্রশ্নও সামনে চলে আসে
মামলার তথ্য বলছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ৪ এপ্রিল অপহরণ করে দীর্ঘ সময় ধরে ধর্ষণ করা হয়। তার পরিবার চরম আতঙ্ক ও মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় মামলা দায়ের করা হলেও, অভিযোগপত্র, মেডিকেল রিপোর্ট এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত হচ্ছে, তা বড় প্রশ্ন।
অভিযোগ উঠেছে, আসামিপক্ষ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে মামলা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসীর চাপের মুখে মামলা নেয় কাশিমপুর থানা।
এই ঘটনায় স্থানীয় কিংবা কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল কিংবা বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি। প্রশ্ন উঠেছে—যেখানে দলের একজন নেতা ধর্ষণ মামলার আসামি, সেখানে নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার খাতিরে কি দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত নয়?
রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তি রক্ষার ক্ষেত্রে এমন অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রয়োগ অপরিহার্য। তা না হলে সমাজে ‘রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়’ অপরাধের সংস্কৃতি আরও শেকড় গেড়ে বসবে।
এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দেয়, কিশোরী, নারী কিংবা শিশুর জন্য বাংলাদেশ এখনও নিরাপদ হয়ে ওঠেনি। অপরাধীরা পরিচিত মুখ, সমাজের নেতৃস্থানীয় কেউ হলে বিচারপ্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে পড়ে। তবে এ ঘটনায় আদালতের রায় সাহস জুগিয়েছে যে, আইনের চোখে সবাই সমান।
