১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পেছনে ছিল বাংলাদেশকে পাকিস্তান ফেরত করার পরিকল্পনা। তবে ভারতের কড়া হুঁশারি সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়। কীভাবে কূটনৈতিক চাপ ইতিহাস বদলে দিল—বিশ্লেষণ।
১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্টের ভোরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানের আদলে ফিরিয়ে নেওয়া। সামরিক ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীরা তখন রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন করে নতুন রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। খন্দকার মোশতাক আহমেদ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই সে পরিকল্পনা সামনে আসে।
কিন্তু ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেন প্রতিবেশী ভারত।
হত্যাকাণ্ডের সময় ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন না ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেন।
তিনি কলকাতা হয়ে ১৬ই অগাস্ট ঢাকায় ফিরে আসেন।
এর পরবর্তী দুই দিনে টানা বৈঠক শেষে ১৮ই অগাস্ট বঙ্গভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট মোশতাকের হাতে ভারতের কঠোর বার্তা পৌঁছে দেন।
সমর সেনের হাতে থাকা এক খণ্ড কাগজে লেখা ছিল—
“যদি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করা হয় এবং কোনো দেশের সঙ্গে কনফেডারেশন করা হয়, তাহলে ভারতের সাথে থাকা বৈধ চুক্তির আওতায় ভারতের সেনাবাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।
কিন্তু আপনি যদি নাম পরিবর্তন এবং তথাকথিত কনফেডারেশনের ধারণা থেকে বিরত থাকেন, তাহলে ভারত ১৫ই অগাস্ট থেকে যাই ঘটুক না কেন, তাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে বিবেচনা করবে।”
এই নোট পাঠ করার সময় মোশতাক বিমর্ষ মুখে চেয়ারে বসে পড়েন।
ইতিহাসবিদদের মতে,
এ ছিল ভারতের এক কড়া হুমকি, যা সরাসরি বাংলাদেশকে পাকিস্তানমুখী করার প্রচেষ্টা ভেস্তে দেয়।
ভারত কখনোই চাইতে পারেনি যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল চেতনা ধ্বংস হোক এবং পাকিস্তানপন্থি সামরিক-বেসামরিক গোষ্ঠী পুনরায় ক্ষমতার কেন্দ্র দখল করুক।
কারণ, একটি প্রো-পাকিস্তান বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত নিরাপত্তাকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলত।
তাই ভারতের হস্তক্ষেপ শুধু একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে রক্ষা নয়, বরং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির এক অপরিহার্য পদক্ষেপ ছিল।
বিশ্লেষকদের মতে,
যদি ভারত সে সময় নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকত, তবে “বাংলাদেশ” হয়তো অচিরেই নতুন নামে ও কনফেডারেশনের ছদ্মবেশে পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হত।
স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় বাংলাদেশ আবার অদৃশ্য হয়ে যেত দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র থেকে।
১৫ই অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডি।
তবে ১৮ই অগাস্ট ভারতের দৃঢ় হস্তক্ষেপই সেই ষড়যন্ত্রকে পূর্ণতা পেতে দেয়নি।
এ ঘটনা প্রমাণ করে, স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের টিকে থাকা শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম নয়, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কূটনীতির এক জটিল সমীকরণের ফল।
