 
                  নেপালে নতুন ইতিহাস—সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। শপথ নেওয়ার দিনই ঘোষণা হলো জাতীয় নির্বাচনের তারিখ।
নেপালের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ঐতিহাসিক অধ্যায় রচিত হলো। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি গতকাল শুক্রবার দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। ৭৩ বছর বয়সী এই নারী নেতা শুধু নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীই নন, এর আগে তিনি দেশটির প্রথম নারী প্রধান বিচারপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ। আগামী বছরের ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচন।
কাঠমান্ডুর প্রেসিডেন্ট ভবন শীতল নিবাসে স্থানীয় সময় রাত নয়টার পর অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল তাঁকে শপথ পড়ান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধান বিচারপতি, সরকারের জ্যেষ্ঠ আমলারা, সেনা-নৌ-বিমানবাহিনীর প্রধানগণ এবং বিদেশি কূটনীতিকেরা।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বের মধ্যে এই শপথ অনুষ্ঠানকে অনেকেই স্থিতিশীলতার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
সুশীলার পটভূমি ও রাজনৈতিক গুরুত্ব
সুশীলা কারকি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর বিচারিক ক্যারিয়ার জুড়ে দুর্নীতি বিরোধী অবস্থান এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন।
এবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মধ্য দিয়ে নেপালের গণতন্ত্র ও নারীর ক্ষমতায়নে নতুন মাত্রা যোগ হলো।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদে থাকার অভিজ্ঞতা তাঁকে একটি নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি দিয়েছে,
যা রাজনৈতিক অচলাবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
বিশেষত, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে তাঁর নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি দেশি-বিদেশি আস্থা অর্জনে সহায়ক হবে।
সংকট ও চ্যালেঞ্জ
নেপাল বর্তমানে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অবিশ্বাস, দুর্নীতি, এবং নেপালের উত্তর ও দক্ষিণ প্রতিবেশী ভারত-চীনের প্রভাব—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল।
সুশীলার নেতৃত্বে প্রথম কাজ হবে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা নিশ্চিত করা।
একই সঙ্গে দেশের প্রশাসনিক অঙ্গগুলোকে নিরপেক্ষ রাখাও হবে তাঁর বড় চ্যালেঞ্জ।
নির্বাচন ঘোষণার তাৎপর্য
সুশীলার শপথ গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে জনগণকে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার কেবল ক্ষমতায় বসার জন্য নয়,
বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
নেপালের জনগণ বহুদিন ধরেই একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক কাঠামোর অপেক্ষায় ছিলেন। সুশীলা কারকির নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের সূচনা
এবং নির্বাচন ঘোষণার মাধ্যমে দেশটি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো। এখন দেখার বিষয়—আগামী ৫ মার্চের নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়।

 
                         
         
         
        