যুক্তরাজ্যের ‘কিং চার্লস তৃতীয় হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করতে লন্ডন যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু দ্য কিংস ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকায় কোথাও নেই তার নাম। তাহলে কীভাবে এই পুরস্কার?
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার ১০ মাসের মাথায় ৯ জুন ২০২৫ তারিখে যুক্তরাজ্যে পা রাখছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস—যেটি হবে তার #১১তম_বিদেশ_সফর। বাংলাদেশ সরকারের দাবি অনুযায়ী, তিনি এবার ‘কিং চার্লস তৃতীয় হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করবেন রাজা চার্লসের হাত থেকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকীর ভাষ্য অনুযায়ী, ১২ জুন লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে অনুষ্ঠিতব্য এক অনাড়ম্বর আয়োজনে ড. ইউনূস এই সম্মাননা গ্রহণ করবেন। একে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ‘জাতীয় গৌরব’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
❗ তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো—যুক্তরাজ্যের দ্য কিংস ফাউন্ডেশন গত ২১ মে ২০২৫ তারিখে তাদের ওয়েবসাইটে ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’-এর জন্য মনোনীতদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম কোথাও নেই।
কী বলছে দ্য কিংস ফাউন্ডেশন?
দ্য কিংস ফাউন্ডেশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই পুরস্কারটি মূলত দেওয়া হয় ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ।
এ বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে যারা পুরস্কার পাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন:
- Emerging Talent: এমিলি হার্স্ট, নেইল কানিংহাম, রুয়াধ থমসন
- Young Entrepreneur: বার্নাবি হর্ন, জেকব মার্কস, এমা রোজ অ্যালেন, বেথ সামারভিল
- International Impact: ফ্যাশন কাউন্সিল জার্মানি, আকোজে রেসিডেন্সি, কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অফ আর্কিটেক্টস
- Advocate of the Year: অ্যালিস লক্সটন, টনি সিং, প্যাট্রিক হোল্ডেন
- Community Partnership of the Year: ভাইব্রেন্ট কমিউনিটি সার্ভিস, স্টিফেন লরেন্স ডে ফাউন্ডেশন, আউচিনলেক প্রাইমারি স্কুল
- Corporate of the Year: পাতাগনিয়া, পুকা টি, স্কটিশ পাওয়ার
- Education: ক্লাউডিয়া পেনারান্ডা ফুয়েন্তেস, সামান্থা বাকলি, রবার্ট ফসেট
- Innovation Practice: ইয়াসমিন লারি, আম্মার জিমান, টিমারাস বিস্টিজ
এই তালিকায় কোথাও ড. ইউনূসের নাম নেই। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি কোন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার নিচ্ছেন? নাকি কোনো ভিন্ন মাধ্যমে?
সম্ভাব্য ব্যাখ্যা কী হতে পারে?
তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণে কয়েকটি অনুমান করা যেতে পারে:
- কোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে: ইউনূস যদি উপস্থাপন করেন যে তিনি ওই তিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের (যেমন আকোজে রেসিডেন্সি, কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন) কোনো অংশীদার, তাহলে ‘indirect recognition’ পেতে পারেন।
- বিশেষ অতিথি বা বক্তা: সম্ভবত তিনি অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, এবং রাজনৈতিকভাবে সেটিকে ‘পুরস্কার গ্রহণ’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।
- প্রোপাগান্ডা মূলক ব্যাখ্যা: এটি হতে পারে সরকার বা ইউনূসপন্থী মহলের পূর্ব-পরিকল্পিত প্রচারণা—যার উদ্দেশ্য দেশের জনগণের সামনে একটি ‘সফলতা’র গল্প তুলে ধরা।
সত্যিই যদি ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে এ বছর ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ পেয়ে থাকেন, তাহলে সেটির প্রামাণ্য উৎস কোথায়? কেন দ্য কিংস ফাউন্ডেশনের তালিকায় তার নাম নেই? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত পুরো বিষয়টি রহস্যে ঢাকা থেকে যাচ্ছে।
এখন দেখার বিষয়, ১২ জুন অনুষ্ঠানে কী ঘটে। রাজা চার্লস সত্যিই ইউনূসকে কোনো সম্মাননা প্রদান করেন কিনা, নাকি এটি কেবল একটি কৌশলগত ‘ছায়াপুরস্কার’—তা নির্ভর করবে দিনের আলোয় পাওয়া চিত্র ও বিবরণীর উপর।
