
২০২৫ সালে গরুর চামড়া বিক্রি না হওয়ার কারণ শুধু বাজার নয়, বরং ভারতীয় নিষেধাজ্ঞা ও লেদার শিল্পের অভ্যন্তরীণ সংকট। চামড়া রপ্তানিতে ইন্ডিয়া এফেক্ট ও সুদে ডুবে নিঃস্ব ট্যানারি ব্যবসায়ীদের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে।
২০২৫ সালের কোরবানির ঈদ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের গরুর চামড়া বাজারে অস্বাভাবিক মন্দা দেখা দেয়। অনেক এলাকায় চামড়া বিক্রি তো দূরের কথা, সংরক্ষণ না হওয়ায় পচে ফেলে দিতে হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—এই বিপর্যয়ের জন্য আসলেই কি লবণের দাম দায়ী, নাকি রয়েছে কোনো গভীরতর কারণ?
ড. মামুনুর রশীদের বিশ্লেষণ বলছে—এবারের ব্যর্থতার মূল কারণ “ইন্ডিয়া এফেক্ট”।
🇮🇳 ভারতের নিষেধাজ্ঞার ছায়া:
বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানির প্রধান তিন গন্তব্য হলো:
- ভিয়েতনাম
- ইন্ডিয়া
- ইন্দোনেশিয়া
প্রতিবছর অক্টোবর ও ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে এসব দেশে বড় আকারে চামড়া রপ্তানি হয়। কিন্তু ২০২৫ সালে ভারতের পক্ষ থেকে সরাসরি এবং ট্রানজিট উভয় ধরনের শিপমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পুরো চামড়া সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ে।
🔥 ব্যবসায়ীদের নিঃস্বতা ও দেউলিয়াত্ব:
চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেক ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে ঋণে জর্জরিত।
- ব্যাংকঋণের সুদ দিতে না পেরে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
- হাজারিবাগ-সাভার রিলোকেশনের পরেও যে কাঙ্ক্ষিত সুবিধা ছিল, তা বাস্তবায়ন হয়নি।
- সম্প্রতি কয়েকটি গুদামে আগুন, আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠে এসেছে।
এর মধ্যে ব্যবসায়ীদের একাংশ পরিস্থিতির দায় এড়াতে লবণের ঘাটতির অজুহাত দিচ্ছেন, যা বাস্তবতার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।
🧂 লবণের অজুহাত নাকি নজর ঘোরানো?
লবণ সংরক্ষণ চামড়ার একটি ধাপ হলেও মূল সমস্যা নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন:
“যদি রপ্তানির বাজার ঠিক থাকত, চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের চেয়ে কয়েক গুণ দামী কেমিক্যালও ব্যবহৃত হতো।”
সুতরাং মূল ব্যর্থতা রপ্তানি নীতির ভাঙন, বাণিজ্য কূটনীতির দুর্বলতা এবং কাঠামোগত অযোগ্যতা।
চামড়া শিল্প বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর একটি।
কিন্তু ভারতের নিষেধাজ্ঞা, দুর্বল নীতিমালা এবং ভঙ্গুর আর্থিক কাঠামোর কারণে এ শিল্প বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছে।
প্রশ্ন এখন—সরকার কি ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসবে? ট্যানারি শিল্পে নতুন বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি আনবে? নাকি চামড়া শিল্পকে ছেড়ে দেবে অবহেলার ধ্বংসস্তূপে?
📌 আরও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও মাঠপর্যায়ের প্রতিবেদন পেতে আমাদের পোর্টালে নজর রাখুন।

 
                         
         
         
        