অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ২০২৬ সালের নির্বাচনের ঘোষণাকে ঘিরে এনসিপি নেতাদের মধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। হাসনাত ও নাসিরউদ্দিনের বক্তব্য বিশ্লেষণ করছে এই রিপোর্ট।

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক শেষে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘোষণা আসে। যদিও এই ঘোষণায় অনেকেই আশার আলো দেখছেন, কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনের ভেতরে-ভিতরে শুরু হয়েছে পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া এবং দলীয় বিভাজনের স্পষ্ট ইঙ্গিত।
বেশ কয়েকজন বিশ্লেষকের মতে, নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার আগেই রাজনৈতিক ঐকমত্য, সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া স্পষ্ট না হলে এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠতে পারে।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, “এই সরকার শুধুমাত্র নির্বাচন দেওয়ার জন্য নয়, এটি একটি অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একে নির্বাচন নয়, বরং দেশের বিচার ও সংস্কারের দায় আগে নিতে হবে।”
তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, জুলাই মাসের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’, মৌলিক সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচার ছাড়া কোনো নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণাকে জনগণের সাথে প্রতারণা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
এই পোস্টেই মন্তব্য করেন এনসিপির প্রভাবশালী নেতা নাসিরউদ্দিন পাটওয়ারী। তিনি লিখেন,
“হাসনাত, ভোটে জেতা এতো সহজ? মেম্বার ইলেকশন করলেও তো জিতবা না। আগে মেম্বার ইলেকশনে জিতে দেখাও।”
এটি নিছক রাজনৈতিক রসিকতা বলে উড়িয়ে দেওয়া গেলেও এর মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে একটি বৃহত্তর বার্তা—ক্ষমতা ও নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা।
জবাবে হাসনাত বলেন, “আপনাদের সরকারকে মেম্বার ইলেকশন দিতে বলেন আগে।”
এই মন্তব্য কার্যত একটি প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিরোধের বার্তা, যা ইঙ্গিত দেয়—সরকারি কাঠামো ও ক্ষমতার প্রয়োগে রাজনৈতিক বিরোধীরা কতটা অসন্তুষ্ট।
নির্বাচনের সময়সূচি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ফেব্রুয়ারি ২০২৬, কিন্তু এনসিপির অনেক নেতা এখনো এর আগে 'জুলাই সনদ' বাস্তবায়ন চায়। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- বিচার প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান অগ্রগতি
- দলনিরপেক্ষ প্রশাসন
- নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন
- নির্বাচনী মাঠে সকল দলের সমান সুযোগ
এই দাবি বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচন আয়োজন করলে জনগণের আস্থা অর্জন কঠিন হবে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
নাসিরউদ্দিন ও হাসনাতের বাকযুদ্ধ এই বাস্তবতাকেই সামনে নিয়ে আসে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শুধু একটি নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করলেই দায়িত্ব শেষ করা যাবে না।
বরং দলের ভেতরকার দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং নেতৃত্বের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে নেতাকর্মীরা।
২০২৬ সালের নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নির্ভর করছে জুলাই সনদ ও বিচার-সংস্কার কতোটা দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়িত হয়, তার উপর।
অন্যদিকে, এনসিপির ভেতরকার এই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় বুঝিয়ে দিচ্ছে—নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রাধান্য নিয়ে দলে ভেতরেও স্পষ্ট বিভাজন তৈরি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
