আওয়ামী লীগের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শেখ হাসিনা জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বর্তমান সংকট মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তিনি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার প্রতি দলের অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
২৩ জুন ১৯৪৯ সালে ঢাকার ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে জন্ম নেয় একটি রাজনৈতিক শক্তি, যা ভবিষ্যতে হয়ে উঠবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী সংগঠন — বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মওলানা ভাসানীর হাত ধরে শুরু হওয়া সেই যাত্রায় যুক্ত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো কিংবদন্তি নেতারা।
৭৬ বছর পর এই দলটি কেবল অতীতের গৌরবগাথাই বহন করছে না, বরং একটি গভীর রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রীয় পরিচয়, সাংবিধানিক শাসন এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও সংগ্রাম করছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তার বাণীতে বলেন,
“একটি অসাংবিধানিক সরকার আমাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে, লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও লক্ষ লক্ষ মানুষকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করছে।”
এই বক্তব্যে তিনি সরাসরি বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং ১৯৭১ সালের পাক হানাদার শাসকের দমননীতি ও আজকের পরিস্থিতির মধ্যে তুলনা টানেন। ইতিহাসের পাঠক মাত্রই জানেন, এই ধরনের তুলনা কেবল রাজনৈতিক প্রতীকীতা নয়, বরং এটি বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাঁর দলের অবস্থান ও প্রতিরোধ কৌশলের ইঙ্গিতও বহন করে।
শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা ও সাহসিকতাকে আওয়ামী লীগের প্রধান অস্ত্র হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
“বঙ্গবন্ধুর সাহস ও বিচক্ষণতাই আমাদের অস্ত্র। অতীতের মতো এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশকে রাহুমুক্ত করবে।”
এই বক্তব্য আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং বর্তমান সংকটে তার দায়িত্ববোধকে তুলে ধরে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা তাঁর শাসনামলের সাফল্য পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন:
- দারিদ্র্য হ্রাস
- জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ
- ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সূচনা
- পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ন্যাশনাল ডেটা সেন্টারসহ বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প
এই অর্জনগুলো কেবল একটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্তি নয়, বরং একটি রাষ্ট্রের প্রগতির অভিন্ন অংশ।
বক্তব্যের শেষাংশে শেখ হাসিনা বলেন,
“বাংলাদেশ আর আওয়ামী লীগ সমার্থক। এই মাটি থেকে কেউ আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলতে পারবে না।”
এই মন্তব্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বর্তমান সংকটে দলের আত্মবিশ্বাস এবং দীর্ঘমেয়াদি টিকে থাকার কৌশলের প্রতিফলন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বাণী একদিকে যেমন আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক ভূমিকার স্মরণিকা, তেমনি বর্তমান শাসনব্যবস্থার প্রতি এক কড়া রাজনৈতিক প্রতিবাদ। দেশের রাজনৈতিক সমীকরণে যেখানে বিরোধী দল কার্যত নিষ্ক্রিয়, সেখানে আওয়ামী লীগ নিজেকে একটি “আদর্শিক আন্দোলনরত শক্তি” হিসেবে পুনরায় উপস্থাপন করছে।
এই বাণী কেবল শুভেচ্ছা নয়, এটি একটি আহ্বান—একটি রাজনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণাও হতে পারে, যার লক্ষ্য ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’।
৭৬ বছরে পদার্পণ করা আওয়ামী লীগ আজ চরম প্রতিকূলতায় দাঁড়িয়ে আবারও প্রতিরোধের রাজনীতির পথে। শেখ হাসিনার বাণী কেবল অতীত স্মরণ নয়—এটি একটি ভবিষ্যৎ প্রতিজ্ঞা। প্রশ্ন হলো—এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আওয়ামী লীগ কতটা সংগঠিত, এবং তার নেতৃত্ব কতটা প্রস্তুত?
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু — এই স্লোগানের ভেতরেই হয়তো ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নিহিত।
