রাজশাহীর তাহেরপুরে বাকপ্রতিবন্ধী পথশিশু ধর্ষণের ঘটনায় স্তব্ধ দেশ। মানবতা, আইনি শৃঙ্খলা ও সামাজিক নিরাপত্তা আজ প্রশ্নের মুখে। জানুন বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে ঘটে যাওয়া এক নির্মম ধর্ষণের ঘটনায় বাংলাদেশ আবারও কেঁপে উঠেছে। এই ঘটনা কেবল একটি ফৌজদারি অপরাধ নয়; এটি মানবিকতার ওপর এক অমানবিক আঘাত, যা আমাদের আইন-শৃঙ্খলা, সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ভয়াবহ দুর্বলতাকে প্রকাশ করে।
ধর্ষণের শিকার শিশুটি একজন বাকপ্রতিবন্ধী পথশিশু। তার কোনো নির্দিষ্ট আশ্রয় ছিল না। সে তাহেরপুর বাজার এলাকায় বসবাস করত এবং কখনও ফুল বিক্রি করত। গত সোমবার (২৪ জুন) রাত ১১টার দিকে তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়দের তৎপরতায় প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এই ঘটনায় সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করা হলেও এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে অপরাধীর নাম প্রকাশ হয়নি। পুলিশের ভাষ্যমতে, তদন্ত চলছে এবং গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—কীভাবে একটি বাকপ্রতিবন্ধী পথশিশু রাতের আধারে ধর্ষণের শিকার হয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই? এর দায় কেবল অভিযুক্তদের নয়, বরং গোটা সমাজব্যবস্থার।
এই শিশু যে বাকপ্রতিবন্ধী ও পথবাসী ছিল, সেই তথ্যই আমাদের সমাজের অদৃষ্টপূর্ব বৈষম্যের ছবি তুলে ধরে। এতদিন কেউ জানত না, এই শিশু কোথায় ঘুমায়, কে তাকে নিরাপত্তা দেয়, কিংবা কেউ কি কখনও খোঁজ নিয়েছে তার?
রাষ্ট্রের দায়িত্ব যেখানে এইসব অসহায়দের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, সেখানে বাস্তবতা হলো—তারা নিরাপত্তাহীনতায়, বঞ্চনায় এবং অবহেলায় বেড়ে ওঠে।
এই ঘটনা শুধু দুঃখজনক নয়, এটি মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী মঙ্গলবার বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এই প্রতিবাদ আমাদের জানান দেয়, সমাজ এখনো পুরোপুরি নিষ্প্রাণ হয়নি। এখনো মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে একত্রিত হতে জানে। কিন্তু এই বিক্ষোভ যদি একদিনেই নিঃশেষ হয়ে যায়, তবে অপরাধীরা আবারও মাথাচাড়া দেবে।
রাজশাহীর তাহেরপুরে বাকপ্রতিবন্ধী পথশিশুকে ধর্ষণের এই ঘটনা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয়, মানবতা আজ হুমকির মুখে। এই হুমকি কেবল অপরাধীদের কারণে নয়, আমাদের অবহেলা, নির্বিকারতা, এবং দায়সারা নীতির কারণেও। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে একটি ন্যায়ের সমাজ গড়তে চাই, তবে আজই আমাদের দাঁড়াতে হবে ওই শিশুটির পাশে, এবং তার মতো অসংখ্য নিপীড়িতের জন্য।
