জেনেভায় ৫৯তম জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশনে বাংলাদেশের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তিন দিনব্যাপী পোস্টার প্রদর্শনীতে বিশ্ব মানবাধিকার কর্মীদের গভীর উদ্বেগ—ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে উঠছে।
গত ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত জেনেভার জাতিসংঘ চত্বরে অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমী ও প্রভাবশালী মানবাধিকার পোস্টার প্রদর্শনী। ৫৯তম জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের চলমান নিয়মিত অধিবেশনের ছায়াতলে আয়োজিত এই প্রদর্শনী বিশ্ববাসীর চোখে নতুন করে তুলে ধরল বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্রমবর্ধমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহতা।
জেনেভাভিত্তিক তিনটি মানবাধিকার সংগঠন—International Forum for Secular Bangladesh, Bangladesh Minority Alliance (Switzerland Chapter) এবং Tumuku Development and Cultural Union—এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে। তিন দিনে প্রদর্শিত হয় পাঁচটি বিভাগে ভাগ করা মোট ৩০টি পোস্টার, যাতে ফুটে ওঠে—সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, গণমাধ্যম নিপীড়ন, নারী ও শিশুদের ওপর মব-সন্ত্রাস, রাজনৈতিক বন্দিত্ব ও বিশেষভাবে শ্রী চিন্ময় দাস প্রভুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি।
প্রদর্শনীর আয়োজক রহমান খলিলুর মামুন জানান, “এই প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য ছিল—জাতিসংঘ অধিবেশনে উপস্থিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মী, কূটনীতিক ও এনজিও প্রতিনিধিদের সামনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বাস্তবভাবে তুলে ধরা।”
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অসংখ্য দর্শনার্থী অংশ নেন।





পশতুন মানবাধিকার কর্মী ফজলুর রহমান আফ্রিদি একাধিক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের পোস্টার দেখে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “এই বর্বরতা মধ্যযুগীয়! ইউনুস এই নরকীয়তার পৃষ্ঠপোষকতা করে নোবেল শান্তি পুরস্কারকে কলঙ্কিত করেছেন।”
সুইজারল্যান্ডের সোস্যালিস্ট পার্টির জেনেভা শাখার সেক্রেটারি Sylvain Thevot প্রদর্শনী দেখে বলেন, “বাংলাদেশ পরিস্থিতি আমরা পার্টি ফোরামে আলোচনা করব, কারণ এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
জার্মানভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনের নেত্রী Claudia Wadlich বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। গত ১১ মাস ধরে গণমাধ্যম বন্ধ, রাজনৈতিক বিরোধীদের কারাবরণ, সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন চলছে। এটি একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে পরিণত হয়েছে।”
এছাড়াও Aleena Princess, Dr. Ravuri Balaraju, Aslam Ansari, Dr. Rohiny-সহ আরও অনেক বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এই প্রদর্শনী শুধু মানবিক করুণার জাগরণ নয়, এটি ছিল এক গভীর রাজনৈতিক বার্তা—বাংলাদেশ এখন ইউনুস নেতৃত্বাধীন এক বিপজ্জনক মোড় নিয়েছে, যেখানে একদিকে রাষ্ট্রীয় মদদে সহিংসতা বাড়ছে, অন্যদিকে জনগণ ক্রমশ অতীত শেখ হাসিনা সরকারের সময়কে তুলনামূলক নিরাপদ ও স্থিতিশীল বলে বিবেচনা করছে।
বহু কূটনীতিক মন্তব্য করেছেন—“বর্তমান সরকার রাজনৈতিক দমন-পীড়নের এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা দেশটিকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র এবং গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।” এই অভিমত বারবার ঘুরেফিরে এসেছে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী দর্শকদের আলোচনায়।
জেনেভার এই তিন দিন ছিল বাংলাদেশের জন্য এক সতর্কবার্তা। যতই অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ আর প্রচারমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে আন্তর্জাতিক চিত্র আড়াল করার চেষ্টা চলুক, বৈশ্বিক চোখে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ড. ইউনুস সরকারের অধীনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এখন আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দুতে।
এই বিশ্বজনমত যদি শক্তভাবে আন্তর্জাতিক ফোরামে গৃহীত হয়, তবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় বড় ধরনের কূটনৈতিক চাপ ও হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।
