 
                  বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাহসিকতা, আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও ইউনূস প্রশাসনের ১১ মাসের দুঃশাসনের নির্মম চিত্র বিশ্লেষণ করুন এই রিপোর্টে।
হাসান ইকবাল;
শেখ হাসিনার মুখে মানুষের হাসি , তিনিই বাঙালির আশা শেষ আশ্রয়স্থল;
এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়; জ্বালে পুড়ে মরে ছারখার; তবু মাথা নোয়াবার নয়,- কবি সুকান্তের এই কবিতায় পংক্তি বারবার নিজের অজান্তেই ঠোঁটে এসেছে। মানুষের সঙ্গে প্রবল উৎসাহ ও আনন্দের সঙ্গে তুমুল উত্তেজনায় টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছিলাম। যার হাত দিয়ে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সরক রেল যোগাযোগের জন্য শত বছরের স্বপ্ন যুমনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের ওপর দিয়ে যোগাযোগ ও উন্নয়নের নতুন দোয়ার খুলেছিল।সেই শেখ হাসিনার হাত ধরেই দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগের দুয়ার খুলতে বহুল অনাকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর মূল কার্যক্রম উদ্বোধন করে আমাদের মাথা উঁচু করেছে। এই দৃশ্য দেখতে দেখতে আবেগাপ্লুত খাচ্ছিলাম।
বারবার ভাবছিলাম, এই সেই দিন যেন আমাদের বিশিষ্টজনরা বিশ্ব ব্যাংক সরে যাওয়ার পদ্মা সেতুর সম্ভব নয় বলে রাত জেগে টিভির নাটক শোতে হাত নেড়ে , যুক্তির তুফান তুলে কি সমালোচনার তীর শেখ হাসিনার দিকে ছুড়েছিলেন। কত রতি- মহারথী আঙ্গুল তুলে দেখিয়েছিলেন বিশ্ব ব্যাংকের চুটিয়ে শেখ হাসিনা মহা ভুলের সাগরে ডুবতে বসেছেন।
কিন্তু ৬. ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নদী শাসন ও মূল কাজের উদ্বোধন করে যখন মুজিব কন্যা, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হাসিমুখে ঘোষণা করলেন বিশ্ব দেখুন আমরাও পারি।
তখন মনে হচ্ছিল তার মুখে দেশের মানুষের হাসি। পরাশক্তি কোড চাই রাজনীতির অভ্যন্তরে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের জটিল অংক অবলীলায় সরিয়ে দিলেন তিনি। বলেছিলেন, প্রয়োজনে পর্দার সাথে নির্মিত হবে। অনেকেই বলেছিলেন, বিশ্বব্যাংকে বাদ দিয়ে, প্রতিমার শক্তিকে চটিয়ে দুঃস্বপ্ন।
কিন্তু যে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে দূঢ়তার সঙ্গে ফাঁসির মঞ্চকে তুচ্ছ করে, জেল, জুলুম, নির্যাতনকে হাসিমুখে বরণ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
এই জাতি বীরের জাতি, ঠিক তেমনি কাজ তার কন্যা শেখ হাসিনা কত শত সমালোচনা, নিন্দা আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে অমিত সাহস আর রাষ্ট্রনায়কচিত নেতৃত্বের মহিমায় প্রমাণ করেছেন তিনিই পারেন।।
এ দুঃস্বপ্ন নয়। এটা সত্যিই। এর জন্যই তিনি মুজিব কন্যা দেশ রত্ন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠা নগ্ন থেকেই জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস আর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশকে স্বাধীন- সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা, বাঙালি জাতিকে স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় আত্মপরিচয়ের সুযোগ করে দেওয়া, বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত করা সহ বাঙালির যা কিছু প্রাপ্তি, যা কিছু গৌরবে, তার ছবি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালী জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ও সাংস্কৃতি মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে একটি শক্তিশালী ও গণমুখী সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলেন।
বাংলাদেশের সব জেলা, মহকুমা থেকে শুরু করে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে কারণের বেশে ঘুরে বেড়ান। নিজেরই চোখে দেখেন সাধারণ মানুষের দুঃখ, বেদনা, বঞ্চনা; তাদের উপর ঘটে যাওয়া অন্যায়-অবিচার। তাদের দুঃখ – দুর্দশার অবসান ঘটানোর জন্য তিনি দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
তিনি উপলব্ধি করেন, একটি শক্তিশালী সংগঠন ছাড়া সাধারণ মানুষের মুক্তি অর্জন সম্ভব নয়।
তাই তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করতে অধিক মনোযোগ দেন। এর সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে শাসক শ্রেণীর সব অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন; আন্দোলন গড়ে তুলেন।
ফলে বারবার তিনি মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হন ও তাকে কারা বরন করতে হয়। এমনকি জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের কথা বলতে গিয়ে তাকে অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
তাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলার আসামিও করা হয়েছে। কিন্তু তিনি তার নীতিতে ছিলেন হিমালয়ের মত অটল অবিচল।
বহু হুমকির বিরুদ্ধে তিনি বাঙালির ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তার প্রাণপ্রিয় আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীও জেল জুলুম অত্যাচার- নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা অর্জন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে আমরা এক ঐতিহাসিক ঘটনার অদ্ভুত সম্মিলিত দেখতে পাই। এ সংগঠন যেন প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল এক ঐতিহাসিক দায় পরিশোধ করে বাঙালির আজীবন লালিত আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে রূপ দিতে।
আমরা পেছনে ফিরলে বা ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখব,
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রোকাননে বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা যুদ্ধে পরাজিত হন; আর এ পরাজয় হয়েছিল তারাই প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের বেঈমানীর কারণে। সে পরাজয়ের মাধ্যমে বিদেশি শক্তির কাছে দেশের স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। তার প্রমান ২০০ বছর পর ,১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে একটি গণমুখী সংগঠন , ইস্ট পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ ।
আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৯৫৩ সালের সম্মেলনের নাম সংশোধন করে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে জাতির সব ধর্মও মদের মানুষের সংগঠনকে নিজের করে নিতে পারে আরো শক্তিশালী করতে পারে। আওয়ামী লীগ সংগঠনকে সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে তাদের মুক্তির দূত হিসাবে।
২৩ বছরের নিরব বিচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন -সার্বভৌম বাংলাদেশ।
আজকের জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তান নামের দেশটির একটি প্রদেশ, যার ভৌগলিক দূরত্ব ছিল ১২২০০ মাইল। ভাষা, সাংস্কৃতি, সামাজিক রীতি-নীতি, চালচলন, পোশাক, পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, কোন কিছুতেই কোন মিল ছিল না। কেবল ধর্ম ছাড়া অভিন্ন আর কোন উপাদানেই ছিল না। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের বাঙালিরা ছিল সংখ্যায় বেশি, কিন্তু শোষণ করতে সংখ্যালঘুরা, সরকারি চাকরি, সামরিক বা অসামরিক কোন জায়গায় কোন ভালো অবস্থানে বাঙালির সুযোগ ছিল না। অনাহার, দারিদ্র আর বঞ্চনা নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়াই ছিল সে বাঙালির নিয়তি। প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম অবহেলা আর অপমানের মার যদি জীবন ধারণ করতে হতো। বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ অর্জন করতে পূর্ব বাংলা, অথচ তাপ ব্যবহারের অধিকার বাঙ্গালীদের ছিল না।
এমনকি মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার টুকু পর্যন্ত কেড়ে নিতে চেয়েছিল পাকিস্তান শাসক দল।
১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় লড়াই শুরু। ২ মার্চ ফজলুল হক ফলের ছাত্র সবাই সেদিনের ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১১ মার্চ ভাষা দিবস পালন থেকে সংগ্রাম শুরু করে বাঙালিরা। বঙ্গবন্ধু সহ ছাত্র যুব নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ভাষা সংগ্রাম পরিষদ আন্দোলন চালিয়ে যান। বঙ্গবন্ধু আবারও কারাগারে বন্দি হন।
প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই ভাষার জন্য সংগ্রাম অব্যাহত থাকে।
১৯৫২ সালের বাংলা ভাষার মর্যাদার জন্য কর্মপরিষদ গঠন করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে সালাম , বরকত, রফিক, জব্বার, শফিক সহ আরো অনেকেই শাহাদাত বরণ করেন। শুধু মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য।
আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে এক নজির বিহীন গৌরব উল্লেখ্য। আর তারা নেতৃত্ব দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
আজকে আমাদের বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন অবৈধ অসাংবিধানিক দখলদার সন্ত্রাসী স্বাধীনতার বিরোধিতা প্রধান উপদেষ্টা মোঃ ইউনুস অবৈধভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করে দেখেছে, তার সেই স্বপ্ন তোর স্বপ্ন হয়ে থাকবে পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে লক্ষ লক্ষ কোটি কর্মীকে কখনো থামিয়ে রাখতে পারবে না মিথ্যা মামলা হামলা দিয়ে , যত মিথ্যা মামলা হামলা দেওয়া হবে আন্দোলন আরো বেগবান হবে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শক্তি কয়েকগুণ বাড়িয়ে রাজপথে দেশকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।
সুতরাং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস তাই বলে।
অধ্যাপক মোঃ ইউনূসের ১১ মাসের বাংলাদেশ ও জাতি কি পেয়েছি???
চারিদিকে মিথ্যা মামলা, মব সন্ত্রাস , অন্যায় অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ন ধর্ষন চাঁদাবাজি লুটপাট , মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করা, বাঙালির ইতিহাস কে মুছে ফেলা।
চারিদিকে লুটতরাজ অরাজকতা , বাংলাদেশের থানাগুলো বর্তমান সাম্প্রতিক সময়ে অনিরাপদ হয়ে গেছে, সত্যি কথা বললে চাকরি থাকে না, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করলে সরকারি কর্মকর্তাকে অবৈধভাবে অপসারণ করা হয়।
আর আওয়ামী লীগের লোকদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা জামিন না দেওয়া, জেলখানার ভিতরেও নিষ্ঠুর আচরণ করা।
চারিদিকে ধর্ষিতা নারীর মৃত্যুর মিছিল। বাংলাদেশের প্রতিদিন আনাচে-কানাচে প্রান্তে মব সন্ত্রাস তৈরি করে মানুষকে হত্যা করা তা অব্যাহত।
গণতন্ত্রকে হত্যা করা, মানুষের অধিকারকে হত্যা করা, মানুষকে অন্যায় ভাবে দমন নিপীড়ন করা, বাংলাদেশ কে বিদেশীদের হাতে বিক্রি করে দেওয়া।
এই হলো অধ্যাপক মোঃ ইউনুসের ১১ মাসের রাষ্ট্র পরিচালনার ফসল মানুষ ভোগ করছে।

হাসান ইকবাল
সাধারণ সম্পাদক
ইটালি আওয়ামী লীগ

 
                         
         
         
        