গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। এই সহিংসতার পেছনে রাজনৈতিক নিষিদ্ধ সংগঠনের ভূমিকা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান প্রশ্নের মুখে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল—ক্ষমতার রাজনীতিতে ‘অবৈধ আধিপত্য’ কতটা ভয়াবহ হতে পারে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র নেতাকর্মীদের ওপর হামলার জেরে সংঘটিত এই সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৪ জন। আহত বহু। শহরের পরিবেশ রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। এই ঘটনায় স্বাধীন বিচারিক তদন্ত দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান।
এনসিপি নেতারা দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি হাতে নেয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা গতকাল গোপালগঞ্জে গেলে একাধিকবার তাদের ওপর হামলা হয়।
অভিযোগের তীর—আওয়ামী লীগ, তাদের অঙ্গসংগঠন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও সংশ্লিষ্টদের দিকে।
অথচ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে বিরোধী রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা হওয়া শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, এটি আইনের পরিপন্থীও।
এটি প্রশ্ন তোলে, আসলে কি ‘নিষিদ্ধ’ শব্দটি মাঠ পর্যায়ে কার্যকর, নাকি দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে এর প্রয়োগে রয়েছে পক্ষপাত?
গোপালগঞ্জ শহর ও আশপাশে গতকাল (১৬ জুলাই) সকাল থেকে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, তাতে চারজন নিহত হন।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গুলি ও রাবার বুলেট ছোঁড়া, যানবাহনে আগুন লাগানো—সব মিলিয়ে পুরো এলাকা একপ্রকার যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালায়, কিন্তু পরিস্থিতি প্রমাণ করে—আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি সবসময় শান্তি নিশ্চিত করে না, বরং প্রেক্ষাপট যদি রাজনৈতিকভাবে দোদুল্যমান হয়, তাহলে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপও কার্যকরতা হারায়।
ডেভিড বার্গম্যান বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন,
“আমি আশা করি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গতকালের গোপালগঞ্জের সহিংসতার চারজনের মৃত্যুর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত করবে।”
এই বক্তব্য শুধু একটি সাধারণ মতামত নয়, এটি সরাসরি সরকারকে তার দায়িত্বের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়।
কেননা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্বই হলো—সব পক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা।
তবে এখানেই প্রশ্ন জাগে—সরকার কি সত্যিই নিরপেক্ষ? যদি হয়, তবে এনসিপি বা অন্য কোনো বিরোধী দল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করতে গেলে তাদের ওপর হামলা কেন হয়? এই ঘটনায় বিচার হবে কি, নাকি অতীতের মতো সময়ের গহ্বরে হারিয়ে যাবে সবকিছু?
বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বা সহিংসতার পর সঠিক তদন্ত ও বিচারের নজির বিরল। এই ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত না হলে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
বার্গম্যানের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাংবাদিকের এই দাবি শুধু অভ্যন্তরীণ চাপ নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের কূটনৈতিক ব্যর্থতার ইঙ্গিতও হতে পারে, বিশেষ করে যদি মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন সরব হয়।
গোপালগঞ্জের ৪ জনের মৃত্যু নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়।
এটি একটি পরিকল্পিত সহিংসতার চিত্র, যার পেছনে রাজনৈতিক নিষিদ্ধ সংগঠন এবং শাসকদলের নৈতিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই মুহূর্তে সরকারের উচিত—বার্গম্যানের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা।
এটি না হলে কেবল গণতন্ত্র নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা, সংবিধান রক্ষা এবং আগামী নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও গাঢ় সন্দেহ রয়ে যাবে।
