গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষারের বক্তব্য ঘিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের চাঁদাবাজির অভিযোগ ও রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ের চিত্র।
বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি ঐতিহাসিকভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রাণশক্তি হিসেবে বিবেচিত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা ক্রমাগত পরিণত হচ্ছে একটি নিয়ন্ত্রিত, সুবিধাবাদী ও অপরাধপ্রবণ গোষ্ঠীতে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের চাঁদাবাজি নিয়ে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও চিকিৎসক আব্দুন নূর তুষার যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির গভীরতর রোগগুলোর নগ্ন প্রকাশ।
তুষার সরাসরিই অভিযোগ তুলেছেন যে, চাঁদাবাজি এখন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত নয়—এটা রাষ্ট্রের উপরে চাপিয়ে দেওয়া একটি সংগঠিত প্রক্রিয়া।
সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা, এমনকি বৈদ্যুতিক সংযোগ ঠিক রাখতে চিঠিপত্র, সবই রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে নিজেদের সুবিধা আদায়ের নামান্তর।
প্রশ্নটা এখানেই—কেন রাষ্ট্রীয় রিসোর্স কেবল একটি গোষ্ঠীর পেছনে ব্যয় হবে?
যেখানে বিরোধী রাজনীতিকরা হয়রানি ও পুলিশি বাধার মুখে পড়ে, সেখানে কীভাবে একটি ছাত্র সংগঠন সরকারি নিরাপত্তা, প্রটোকল ও সুবিধা নিয়ে দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করতে পারে?
তুষারের বক্তব্য অনুযায়ী,
চাঁদাবাজির ঘটনায় কেন্দ্রীয় কমিটিরই একজন নেতা ধরা পড়েছেন এবং প্রমাণসহ (৭ লাখ টাকা লেনদেনের ভিডিওসহ) সেই ঘটনাকে আড়াল করে শুধু স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিগুলো বাতিল করা হয়েছে।
এটি কেবল ‘ছোট মাছ ধরে বড় মাছ রক্ষা’র উদাহরণই নয়, বরং এটি একটি গভীর রাজনৈতিক সমঝোতা বা নির্লজ্জ প্রশ্রয়।
এই ঘটনাকে ঘিরে কিছু প্রশ্ন উঠেছে—
- যদি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ধরা পড়ে, তাহলে কেন সেই কমিটি বহাল থাকে?
- কি কারণে সেই ভিডিওর ভিত্তিতে তদন্ত বা রিমান্ড হয় না?
- একজনকে রিমান্ডে নিলেই কি গোটা কাঠামোর দায় শেষ হয়ে যায়?
তুষারের মতে, এটি কেবল কয়েকজন তরুণের দায় নয়, বরং এটি একটি বড় রাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ।
ছাত্র আন্দোলনের নামে একটি বিশেষ গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়ে আসলে রাজনীতির একটি ভবিষ্যৎ ফ্রেম তৈরি করছে।
তারা সরকারের ভেতরেও আছে, বাইরেও।
এটা এক ধরনের “ছাত্রীয় Deep State”, যারা ছাত্র রাজনীতির আবরণে ভবিষ্যতের ক্ষমতাকাঠামো তৈরি করছে।
যখন সাধারণ মানুষ দেখছে ঘরের ভেতরে ঢুকে চাঁদা আদায়, মূল্যবান জিনিসপত্র লুট, রাষ্ট্রীয় পুলিশ দিয়ে প্রটেকশন এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঠেকানোর জন্য সরকারি চিঠি—তখন ছাত্র রাজনীতির প্রতি মানুষ কীভাবে আস্থা রাখবে?
এক সময়ের প্রতিবাদের প্রতীক আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভয়ের প্রতীক।
তুষারের ভাষায়,
“এটা হচ্ছে বরফের ওই ১১ ভাগ ডুবে থাকে আর এক ভাগ ওপরে থাকে সে রকম একটা ব্যাপার।”
অর্থাৎ এখন যেটুকু চোখে পড়ছে, তার নিচে আরও ভয়ঙ্কর কিছু লুকানো রয়েছে।
চাঁদাবাজির ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ‘ছাত্রসংগঠনের দুর্বৃত্তায়ন’ নয়—এটি একটি রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা গোষ্ঠীর পলিটিকাল এন্ট্রি স্ট্রাটেজি। আর সেই সুযোগ করে দিচ্ছে রাষ্ট্র নিজেই।
এভাবে চলতে থাকলে শুধু রাজনীতি নয়, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা এবং নাগরিকের নিরাপত্তা—সবই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
